পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
১৯

করিয়াছিলেন। তাঁহার কথাগুলি এখনও আমার কানে বাজিতেছে। তিনি বলিয়াছিলেন—“কলেজের মধ্যে তুমিই সর্ব্বাপেক্ষা দুরন্ত ছেলে।”

 আমার জীবনে সেই এক স্মরণীয় দিন। বলিতে গেলে, নানা দিক দিয়াই সেদিন হইতে আমার জীবনে সম্পূর্ণ নূতন অধ্যায়ের সূচনা হইয়াছিল। সেদিনই আমি সর্ব্বপ্রথম অনুভব করিলাম—কোনও মহৎ কাজে নির্য্যাতন সহ্য করার মধ্যে একটা অনির্বচনীয় আনন্দ আছে। এই আনন্দের সহিত জীবনের আর কোন আনন্দেরই তুলনা হয় না। আর সমস্তই ইহার নিকট তুচ্ছ, অতি তুচ্ছ। আমার জীবনে বাস্তবক্ষেত্রে এই প্রথম নীতি ও স্বাদেশিকতার অগ্নিপরীক্ষা হইয়া গেল। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া যখন বাহির হইলাম, তখন আমার ভবিষ্যৎ জীবনের কর্মপন্থা চূড়ান্তরূপে নির্দ্ধারিত হইয়া গিয়াছে।”

 কলেজ হইতে বিতাড়িত হওয়ার পর সুভাষচন্দ্র কটকে প্রায় বছর দুই কাটান। পরে ১৯১৭ সালে তদানীন্তন ভাইসচ্যান্সেলর স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সহায়তায় তিনি পুনরায় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করিবার অনুমতি লাভ করেন এবং স্কটীশ চার্চ্চ কলেজে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স লইয়া তৃতীয় বার্ষিক শ্রেণীতে ভর্ত্তি হন। এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের সামরিক শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে University Training Corps গঠিত হয়। সুভাষচন্দ্র এই ট্রেণিং কোরে যোগদান করেন। আজিকার আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্ব্বাধিনায়কের যুদ্ধবিদ্যায় ইহাই প্রথম হাতেখড়ি। ইহার পরে তিনি ভারতীয় রক্ষীবাহিনী বা Indian defence force-এ যোগদান করিয়া Captain Grayর নিকট সামরিক শিক্ষা লাভ করেন। সেদিন সুভাষচন্দ্র ভারতের মুক্তির জন্য সশস্ত্র সেনাদল গঠন করিবার সঙ্কল্প লইয়াই ক এত যত্নও আগ্রহের সহিত যুদ্ধ বিদ্যা শিক্ষা করিয়াছিলেন।

 স্কটিশচার্চ্চ কলেজ হইতেই সুভাষচন্দ্র বি, এ, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বি, এ অনার্স পরীক্ষায় তিনি দর্শনশাস্ত্রে দ্বিতীয়স্থান অধিকার করেন।