পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট
৩২৯

করিয়া বলিতে পারি যে, ভারতের কোন জাতীয় নেতা আমার মত এত বহুমুখী অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করিতে পারেন নাই।

 এই অভিজ্ঞতা হইতেই আমি বুঝিতেছি যে ভারতে আমরা যে চেষ্টাই করি না কেন ব্রিটিশকে আমাদের দেশ হইতে তাড়ানো শক্তই হইবে। যদি দেশের সংগ্রমের দ্বারা আমাদের জাতির স্বাধীনতা সম্ভব হইবে বলিয়া মনে করিতাম, তবে এই সঙ্কটময় দুর্গমপথে কখনই আমি পাড়ি দিতাম না। বাহির হইতে স্বদেশের সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করাই আমার স্বদেশ ত্যাগের উদ্দেশ্য। বাহিরের এই সাহায্য ছাড়া ভারতকে স্বাধীন করা অসম্ভব। স্বদেশে জাতীয় স্বাধীনতার জন্য সাহায্য করা প্রয়োজন অত্যন্ত জরুরী এবং সামান্য সাহায্য হইলেই চলিবে। এক্সিস শক্তি কর্ত্তৃক ব্রিটিশের পরাজয়ে ব্রিটিশ শক্তি ও মর্য্যাদা তীব্র আঘাত পাইয়াছে বলিয়া আমাদের কাজ কিছুটা সহজ হইয়া গিয়াছে।

 দেশে আমাদের স্বদেশবাসী নৈতিক ও যুদ্ধোপকরণের দ্বারাই সাহায্য চাহেন। প্রথমত তাহাদের জয় সুনিশ্চিত—এই নৈতিক বিশ্বাস সৃষ্টি করিতে হইবে। নৈতিক বিশ্বাস সৃষ্টি করিতে হইলে যুদ্ধের পরিস্থিতি বুঝিতে হইবে এবং তাহা হইতেই যুদ্ধের ফলাফল জানা যাইবে। দ্বিতীয় কাজ করিতে হইলে ভারতের বাহিরের ভারতীয়রা তাহাদের স্বদেশবাসীদিগকে কিভাবে সাহায্য করিতে পারে এবং প্রয়োজন হইলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের শত্রুদের কাছ হইতেও কি সাহায্য লাভ সম্ভব, তাহা জানিতে হইবে। সমগ্র বিশ্বে আমার স্বদেশবাসীরা যে যেখানে রহিয়াছেন, তাহা তাহাদের স্বদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহণের জন্য আকুল হইয়াছেন ইহা দেখিয়া আমি অত্যন্ত প্রীত হইয়াছি। এক্সিস শক্তিরাও ভারত স্বাধীনতা লাভ করুক ইহা চাহে এবং যদি ভারতীয় জনগণ আবশ্যক বোধ করে, তবে তাহারা তাহাদের শক্তি অনুযায়ী সাহায্য করিতেও প্রস্তুত আছে, ইহা বুঝিয়াও আমি আনন্দিত হইয়াছি।