পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
২১

ছিল। এইজন্যও তিনি বিলাত যাত্রার এই সুযোগ অবহেলা করা উচিত বিবেচনা করেন নাই।

 কেম্ব্রিজ হইতে এক পত্রে তিনি লিখিয়াছিলেন, “আমার মতলব আগামী বৎসর, ‘সিভিল সার্ভিস’ পরীক্ষা দেওয়া এবং পাশ করি বা ফেল করি Moral Science Tripos এর পরীক্ষা দেওয়া। এখানকার ডিগ্রী আমাকে লইতেই হইবে—কারণ ভবিষ্যতে আমার বিশেষ কাজে লাগিবে।” ‘সিভিল সার্ভিস’ পরীক্ষা সম্বন্ধে অপর একখানি পত্রে তিনি লিখেন, “এখনও বুঝিতে পারি নাই, আদর্শভ্রষ্ট হইয়াছি কিনা। আমি আত্মপ্রতারণা করিয়া নিজেকে বুঝাইতে চাই না যে সিভিল সার্ভিসের জন্য পড়াটা ভাল। চিরকাল ঐ জিনিষটাকে ঘৃণা করিতাম—এখনও বোধ হয় করি। এ অবস্থায় সিভিল সার্ভিসের জন্য চেষ্টা করা দুর্ব্বলতার নিদর্শন অথবা কোন দূরবর্ত্তী মঙ্গলের সূচক তাহা ঠিক বুঝিয়া উঠিতে পারি না।” সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা যে তাঁহার উদ্দেশ্য ও আদর্শের পরিপন্থী হইবে এই চিন্তা তাঁহাকে বস্তুতঃই ব্যাকুল করিয়া তুলিয়াছিল। বিদেশে শিক্ষালাভের ইচ্ছার বশবর্ত্তী হইয়াই তিনি বলাত গমনে স্বীকৃত হইয়াছিলেন—কিন্তু সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় কৃতকার্য্য হইলে তাঁহার মূল উদ্দেশ্য যে পণ্ড হইয়া যাইবে, এই ভয় প্রথম হইতেই তাঁহার মনে ছিল। এই সম্পর্কে তিনি এক বন্ধুকে লিখেন, “তবে একটা গুরুতর মুস্কিল এই, যদি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ হইয়া যাই তাহা হইলে আমি উদ্দেশ্যভ্রষ্ট হইব।”

 বিলাতযাত্রার আট নয় মাস পরেই তিনি আই, সি, এস পরীক্ষা দেন। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া তিনি চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। এই পরীক্ষায় তিনি ইংরেজী রচনায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। পাশ করিয়া, তিনি তাঁহার বন্ধুকে লিখিলেন, “তুমি শুনে দুঃখিত হবে যে আমি আই, সি, এস পাশ করে ফেলেছি এবং চতুর্থস্থান অধিকার করেছি।