পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
২৭

তাহাই কালক্রমে বিরাট মহীরুহে পরিণত হইয়া সমগ্র পৃথিবীতে বিস্ময়ের সঞ্চার করিয়াছে। জাতীয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষপদে থাকিয়া সুভাষচন্দ্র শিক্ষার্থীদের মানসক্ষেত্রে স্বদেশপ্রেমের বীজ বপন করেন ও সকলের মনে স্বাধীনতা অর্জ্জনের অত্যুগ্র আকাঙ্ক্ষা জাগাইয়া তোলেন। ফলে, এই জাতীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষাপ্রাপ্ত ছাত্রগণ উত্তরকালে জাতীয় আন্দোলনে যোগদান করিয়া তাঁহাদের আত্মত্যাগ ও কর্ম্মকুশলতায় স্বাধীনতা সংগ্রামকে যথেষ্ট শক্তিশালী করেন।

 জাতীয় কলেজের পরিচালনায় ও কংগ্রেস সংগঠনে নিযুক্ত এই শক্তিশালী যুবক শীঘ্রই গভর্ণমেণ্টের দুশ্চিন্তার কারণ হইয়া উঠিল। গভর্ণমেণ্ট শীঘ্রই বুঝিতে পারিল যে বেশীদিন ইঁহাকে স্বাধীনভাবে থাকিতে দেওয়া বিপজ্জনক। সুভাষচন্দ্রের কার্য্যকলাপ বন্ধ করিবার জন্য সরকার সুযোগের অপেক্ষায় রহিল। ১৯২১ সালে ১৭ই নভেম্বর যুবরাজের ভারতবর্ষে পদার্পণ করিবার কথা ছিল। জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস ও বর্ব্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে অপমানিত ও লাঞ্ছিত দেশবাসী যুবরাজের ভারত আগমন উপলক্ষে সর্ব্বপ্রকার সম্মানপ্রদর্শন ও উৎসবের আয়োজন বর্জ্জন করিতে কৃতসংকল্প হইল। সেইদিন ভারতের সর্ব্বত্র হরতাল ঘোষিত হয়। ১৯২১ সালের ১৭ই নভেম্বর তারিখে বাঙ্‌লাদেশে যে হরতাল প্রতিপালিত হয় সুভাষচন্দ্রের নিপুণ পরিচালনায় তা অসামান্য সাফল্য অর্জন করে। ঐদিন কোলাহলমুখর জনবহুল কলিকাতা মহানগরী জনমানবহীন শ্মশানপুরীর ন্যায় প্রতীয়মান হয়। জনসাধারণ স্বেচ্ছায় এই হরতালে যোগদান করে। দেশের সর্ব্বত্র শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থ কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবকগণ বিশেষ ব্যবস্থা করে। ১৭ই নভেম্বরের শান্তিপূর্ণ হরতালের ব্যাপকতা ও সাফল্য দর্শনে সরকারের গাত্রদাহ উপস্থিত হয়। শাসকবর্গ ভারতবাসীর রাজভক্তির অভাব দেখিয়া ক্ষিপ্তপ্রায় হইয়া উঠে। ভবিষ্যতে যাহাতে যুবরাজকে এইরূপ অপ্রীতিকর পরিস্থিতির