পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

ইতিহাস আমরাই রচনা কর্‌ছি এবং এই বিশ্বাস আছে বলেই আমরা সকল দুঃখকষ্ট সহ্য করতে পারি, অন্ধকারময় বর্ত্তমানকে অগ্রাহ্য করতে পারি, বাস্তবের নিষ্ঠুর সত্যগুলি আদর্শের কঠিন আঘাতে ধূলিসাৎ করতে পারি।” দক্ষিণ কলিকাতার সেবক সমিতির সহসম্পাদক অনাথবন্ধু দত্তকে লিখিত এক পত্রে তিনি লিখিয়াছিলেন, “জেলে আছি তাতে দুঃখ নাই। মায়ের জন্য দুঃখভোগ করা সেত গৌরবের কথা!”

 মান্দালয়ে অবস্থান সম্বন্ধে সুভাষচন্দ্র বলিয়া ছিলেন, “আমার স্পষ্ট মনে আছে, এই সেই বন্দীখানা যেখানে প্রথমে লোকমান্য তিলককে ছয় বৎসরের জন্য ও পরে লালালাজপৎ রায়কে প্রায় এক বৎসরের জন্য বন্দী করিয়া রাখা হইয়াছিল। ইহা চিন্তা করিয়া আমরা সান্ত্বনা পাইতাম ও গর্ব্ব অনুভব করিতাম যে আমরা তাঁহাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া চলিয়াছি।”

 পূর্ব্বে বলিয়াছি সুভাষচন্দ্র যতদিন আলীপুর জেলে আবদ্ধ ছিলেন ততদিন কর্পোরেশনের কাজকর্ম্ম তিনি নিজেই দেখিতেন। মান্দালয়ে আসিয়াও তিনি তাঁহার নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান গুলির কথা এক মুহূর্ত্তের জন্য ভুলিয়া থাকিতে পারেন নাই। বিশেষ করিয়া দক্ষিণ কলিকাতা সেবা সমিতির চিন্তা অহরহই তাঁহার মনে উদয় হইত। সেবা সমিতির কর্ম্মীদিগকে তিনি সর্ব্বদা উৎসাহ ও উপদেশ দিয়া পত্র লিখিতেন। সমাজসেবা ও কুটিরশিল্প সম্বন্ধে সুভাষচন্দ্র ও সেবা সমিতির কর্ম্মীদের মধ্যে যে পত্রালোচনা হইত তাহা সুভাষচন্দ্রের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা লব্ধ গভীর জ্ঞানের পরিচায়ক।

 একে ত জেলখানার আবহাওয়াটাই সাধারণতঃ এইরূপ যে মানুষকে তাহা অমানুষ করিয়া ফেলে। বদ্ধ, নিরানন্দ কারাজীবনে আত্ম-শক্তিতে আস্থা কমিয়া আসে। আদর্শের প্রতি নিষ্ঠা ও অনুরক্তি শিথিল হইয়া যায়—চরিত্র-বল নষ্ট হয়। তাহার উপর মান্দালয় কারাগার সে যুগের