পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
৫১

করিয়া দিই। পারিতো দেশবাসীর পক্ষ হইতে আমরা লোকচক্ষুর অন্তরালে তিলে তিলে জীবন দিয়া প্রায়শ্চিত্ত করিয়া যাইব। তারপর মাথার উপরে যদি ভগবান থাকেন, পৃথিবীতে যদি সত্যের প্রতিষ্ঠা হয়, তবে আমাদের হৃদয়ের কথা দেশবাসী একদিন না একদিন বুঝিবেই বুঝিবে। দেশের নামে এতবড় একটা প্রহসনের অভিনয় দেখিব—বিংশ শতাব্দীর বাঙ্‌লা দেশে যে ‘Nero is fiddling while Rome is burning’ কথার একটী নূতন দৃষ্টান্ত চোখের সামনে ভাসিয়া উঠিবে ইহা কোনও দিন ভাবি নাই।”

 “অনেক কথা বলিয়া ফেলিলাম—হৃদয়ের আবেগ চাপিয়া রাখিতে পারিলাম না। আপনাদের নিতান্ত আপনার বলিয়া মনে করি, তাই এত কথা বলিতে সাহস করিলাম। আপনারা গঠনমূলক কাজে ব্যাপৃত— আশাকরি, আপনারা এই দলাদলির পঙ্কিল আবর্ত্তে আকৃষ্ট হইবেন না।”

 কাজ করিবার আগ্রহ যেখানে কম, কলহ সেখানেই বেশী। মূল লক্ষ্যের প্রতি স্থির দৃষ্টির অভাব হইলেই পথের পার্থক্য বড় হইয়া দেখা দেয়। এই জন্যই নিছক রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে সুভাষচন্দ্র গঠনমূলক কর্ম্মের উপরও জোর দিতেন। “দক্ষিণ কলিকাতা সেবা সমিতি”কে তিনি প্রাণের সহিত ভালবাসিতেন। উল্লিখিত পত্রে তিনি লিখিয়াছিলেন, “আমি কংগ্রেসের কাজ ছাড়িতে পারি তবুও সেবাশ্রমের কাজ ছাড়া আমার পক্ষে অসম্ভব। দরিদ্রনারায়ণের সেবার এমন প্রকৃষ্ট সুযোগ আমি কোথায় পাইব?” সেবা সমিতির অন্যতম কর্ম্মী শ্রীমান হরিচরণ বাগ্‌চীকে এক পত্রে তিনি লিখিয়াছিলেন, “রাজনীতির স্রোত ক্রমশঃ যেরূপ পঙ্কিল হইয়া আসিতেছে, তাহাতে মনে হয় যে, অন্ততঃ কিছু কালের জন্য রাজনীতির ভিতর দিয়া দেশের কোনও বিশেষ উপকার হইবে না। সত্য, ত্যাগ এই দুইটি আদর্শ রাজনীতিক্ষেত্রে যতই লোপ পায়, রাজনীতির কার্য্যকারিতা ততই হ্রাস পাইতে থাকে। রাজনৈতিক আন্দোলন