পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ৩ ]

শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করিলেও সমষ্টিজীবনে, জাতীয়সাধনার ক্ষেত্রে তেমন সার্থকতা ও গৌরব অর্জন করিতে পারে নাই।

 এই দুর্গতির গাঢ় তমিস্রা ভেদ করিয়া নেতাজী জাতির সম্মুখে বিপুল আশা ও সম্ভাবনার আলোকবর্ত্তিকা হস্তে উপস্থিত হইয়াছেন। বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অভ্রান্ত দৃষ্টি ও মৃত্যুঞ্জয় পৌরুষই সুভাষচন্দ্রকে বাঙ্গালী জাতির দেশনায়কের যোগ্যতা দান করিয়াছে। তাই বাঙ্গালীর জাতীয় কবি রবীন্দ্রনাথ সুভাষচন্দ্রকে দেশনায়কের পদে বরণ করিয়া বলিয়াছেন— “নিজেদের মধ্যে দেখা দিয়েছে দুর্বলতা, বাইরে একত্র হয়েছে বিরুদ্ধশক্তি। আমাদের অর্থনীতিতে, কর্মনীতিতে, শ্রেয়োনীতিতে প্রকাশ পেয়েছে নানা ছিদ্র; আমাদের রাষ্ট্রনীতিতে হালে দাঁড়ে তালের মিল নেই। দুর্ভাগ্য যাদের বুদ্ধিকে অধিকার করে জীর্ণদেহে রোগের মতো, তাদের পেয়ে বসে ভেদবুদ্ধি·····এই রকম দুঃসময়ে একান্তই চাই এমন আত্মপ্রতিষ্ঠ শক্তিমান পুরুষের দক্ষিণ হস্ত, যিনি জয়যাত্রার পথে প্রতিকূল ভাগ্যকে তেজের সংগে উপেক্ষা কর্‌তে পারেন। সুভাষচন্দ্র, তোমার রাষ্ট্রিক সাধনার আরম্ভক্ষণে তোমাকে দূর থেকে দেখেছি····বহু অভিজ্ঞতাকে আত্মসাৎ করেছে তোমার জীবন। কর্ত্তব্যক্ষেত্রে দেখলুম তোমার যে পরিণতি তার থেকে পেয়েছি তোমার প্রবল জীবনীশক্তির প্রমাণ। তোমার এই চারিত্রশক্তিকেই বাঙ্গলাদেশের অন্তরের মধ্যে সঞ্চারিত করে দেবার প্রয়োজন সকলের চেয়ে গুরুতর। নানা কারণে আত্মীয় ও পরের হাতে বাংলাদেশ যত কিছু সুযোগ থেকে বঞ্চিত ভাগ্যের সেই বিড়ম্বনাকেই সে আপন পৌরুষের আকর্ষণে ভাগ্যের আশীর্ব্বাদে পরিণত করে তুলবে, এই চাই।······হিংস্র দুঃসময়ের পিঠের উপরে চড়েই বিভীষিকার পথ উত্তীর্ণ হোতে হবে। এই দুঃসাহসিক অভিযানে উৎসাহ দিতে পার্‌বে তুমি, এই আশা করে তোমাকে আমাদের যাত্রনেতার পদে আহ্বান করি।”