নদীর স্রোতের মত কখনও স্বচ্ছ কখনও পঙ্কিল; সবদেশেই এইরূপ ঘটিয়া থাকে। রাজনীতির অবস্থা এখন বাঙ্লাদেশে যাহাই হোক না কেন, তোমরা সে দিকে ভ্রূক্ষেপ না করিয়া সেবার কাজ করিয়া যাও।”
বাঙ্লাদেশকে তিনি যে কত গভীরভাবে ভালবাসিতেন মান্দালয় জেল হইতে লিখিত পত্র পড়িলেই তাহা সম্যক অনুভব করা যায়। বাঙ্লার প্রতিটি ধূলি-কণাকে তিনি নিজের জীবনের চেয়েও অধিক ভালবাসিতেন। কারবাসকালে বাঙ্লার নিরুপম সৌন্দর্য্য তাঁহাব কবি-চিত্তে অপূর্ব্ব মনোরম হইয়া ফুটিয়া উঠিত। শ্রীযুক্ত অনাথবন্ধু দত্তের এক পত্রের উত্তরে তিনি লিখিয়াছিলেন, “আপনি লিখেছেন, “দেশ ও কালের ব্যবধান আপনাকে বাঙ্লাদেশের নিকট আরও প্রিয় করিয়া তুলিয়াছে।” কিন্তু দেশের ও কালের ব্যবধান সোনার বাঙ্লাকে আমার কাছে কত সুন্দর, কত সত্য করে তুলেছে তা আমি বলতে পারি না। ৺দেশবন্ধু তাঁর বাঙ্লার গীতিকবিতায় বলেছেন, বাঙ্লার জল, বাঙ্লার মাটির মধ্যে একটা চিরন্তন সত্য নিহিত আছে। এ উক্তির সত্যতা কি এমনভাবে বুঝতে পারতুম, যদি এখানে এক বৎসর না থাকতুম? “বাঙ্লার ঢেউখেলানো শ্যামল শস্যক্ষেত্র, মধু-গন্ধবহ মুকুলিত আম্রকানন, মন্দিরে মন্দিরে ধূপ-ধুনা-জ্বালা সন্ধ্যার আরতি, গ্রামে গ্রামে ছবির মত কুটীর প্রাঙ্গন” এ সব দৃশ্য— কল্পনার মধ্যদিয়াও কত সুন্দর। প্রাতে অথবা অপরাহ্ণে খণ্ড খণ্ড শুভ্রমেঘ যখন চোখের সামনে ভাসতে ভাসতে চলে যায়, তখন ক্ষণেকের জন্য মনে হয় মেঘদূতের বিরহী যক্ষের মত তাদের মারফৎ অন্তরের কথা কয়েকটি বঙ্গ-জননীর চরণপ্রান্তে পাঠিয়ে দিই। অন্ততঃ বলে পাঠাই, বৈষ্ণবের ভাষায়—
‘তোমারই লাগিয়া কলঙ্কের বোঝা
বহিতে আমার সুখ।’