পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
৬৯

উদ্দীপনায় প্রাণ-চঞ্চল হইয়া উঠিল—এই বিপ্লবী নেতার চিন্তা ও কর্মে দেশের যুবক সম্প্রদায় সত্যিকারের পথনির্দ্দেশ পাইল। যুব-অন্দোলন কেবল স্বাধীনতা-সংগ্রামেই সীমাবদ্ধ থাকিবে না। রাষ্ট্রীয় অধিকার পাইলেই যুব আন্দোলনের প্রয়োজন নিঃশেষ হইবে না। যুব আন্দোলনের কাজ জাতি গঠনের কাজ—বৃহত্তর সমাজ ও রাষ্ট্রের জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যষ্টির জীবনকে আদর্শানুগ ও সমাজনিষ্ঠ করিয়া গঠন করা— কর্ত্তব্যনিষ্ঠা, চরিত্রবত্তা ও আত্মত্যাগের মহণীয় আদর্শে অনুপ্রাণিত সুস্থ ও বলিষ্ঠ সমাজজীবন গড়িয়া তোলা। যুব আন্দোলন কেবল রাষ্ট্রীয় পরাধীনতার বন্ধন হইতেই মুক্তি দিবে না—ব্যক্তি ও সমাজকে সর্বপ্রকার বাঁধা-বন্ধন হইতে মুক্ত করিয়া আত্মবিকাশ ও সার্থকতার পথে উত্তীর্ণ করিয়া দিবে। জাতীয় জীবনে যুব আন্দোলনের প্রয়োজন অপরিসীম। ইহা তথাকথিত রাজনৈতিক আন্দোলন হইতে স্বতন্ত্র—ইহার বিশেষ আদর্শ আছে, স্বতন্ত্র কর্মপ্রণালী আছে। ইহার সমগ্রতার মধ্যে জীবনের সকল ভিন্ন ভিন্ন দিকগুলিই রহিয়াছে। যে স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন আমরা দেখি, সেখানে সকলেই মুক্ত—ব্যক্তি মুক্ত, সমাজ মুক্ত, সেখানে মানুষ রাষ্ট্রীয় বন্ধন হইতে মুক্ত, সামাজিক বন্ধন হইতে মুক্ত, অর্থনৈতিক বন্ধন হইতে মুক্ত। কাব্য, সাহিত্য, শিল্পকলা, দর্শন, বিজ্ঞান, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যায়াম-ক্রীড়া, সমাজ ও রাষ্ট্র—এই সবের মধ্যে দিয়া জাতীয় জীবনের বিকাশ হইয়া থাকে। এই সবের ভিতর দিয়াই তরুণ-প্রাণের আত্ম-প্রকাশ ঘটে। প্রাণ যখন জাগে তখন সহস্রধারায় নিজেকে প্রকাশ করে। শরীরে স্বাস্থ্য ফিরিয়া আসিলে প্রত্যেক অঙ্গে যেরূপ অপূর্ব্বশ্রী ফুটিয়া ওঠে তেমনি মুক্তির আকাঙ্ক্ষা যখন জাতির অন্তরে জাগিয়া উঠে তখন তাহা সব দিক দিয়াই ফুটিয়া বাহির হয়। কংগ্রেস মূলতঃ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। ইহার উদ্দেশ্য সংকীর্ণ না হইলেও সীমাবদ্ধ। তাই যাহারা জীবনকে সমগ্ররূপে দেখিতে চায় তাহারা কংগ্রেসের ন্যায় শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান লইয়াই সন্তুষ্ট থাকিতে