পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৪
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

র্জাতিকতার দিক ও জাতীয়তার দিক। আন্তর্জাতিকতার দিক হইতে এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য বিশ্বের যুব সমাজকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করা। সকল দেশে সকল যুগে তরুণ ও যুবজনের আদর্শ, প্রেরণা, সাধনা ও অনুভূতি মূলতঃ একই। বিশ্বের তরুণ ও যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে এই আত্মীয়তা ও অভেদাত্মকভাব প্রবলতর হইলে মানবকল্যান ও মানবমুক্তির পথ প্রশস্ত হইবে।

 আজ আমরা যে শুধু পরাধীন তাহাই নয়— বিদেশী সভ্যতার কুহকাচ্ছন্ন হইয়া আমরা আমাদের প্রাণধর্ম হারাইয়াছি। আমাদের দেশ, ব্যক্তি ও জাতির জীবনে নূতন কিছু করিবার উৎসাহ ও প্রেরণা (initiative) লোপ পাইয়াছে। আমরা বাধ্য না হইলে বা কশাঘাত না খাইলে সহজে কিছুই করিতে চাহি না। বর্ত্তমানকে উপেক্ষা করিয়া ভবিষ্যতের পানে তাকাইয়া যে অনেক সময় অনেক কাজ করা দরকার এবং বাস্তবের দৈন্য ও গ্লানি ভ্রূক্ষেপ না করিয়া আদর্শের প্রেরণায় জীবনটাকে অনেক সময় যে হাসিতে হাসিতে বিলাইয়া দেওয়া প্রয়োজন—একথা আমরা কার্য্যতঃ মানিয়া চলি না। এইজন্য প্রেরণা বা initiative এর অভাবে ব্যক্তি বা জাতির ইচ্ছাশক্তি ক্রমশঃ ক্ষীণ ও নিস্তেজ হইয়া পড়িয়াছে। ব্যক্তির ও জাতির জীবনে ইচ্ছাশক্তি পুনরায় জাগাইতে না পারিলে মহৎ কিছু করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হইবে না। শুধু আদর্শের প্রেরণায়ই ইচ্ছাশক্তি জাগরিত হয়। আমরা আদর্শ ভুলিয়াছি বলিয়াই আমাদের ইচ্ছাশক্তি আজ এত ক্ষীণ। বর্ত্তমানের ভাব-দৈন্য বিদূরিত করিয়া নিজ নিজ জীবনে আদর্শের প্রতিষ্ঠা না করিতে পারিলে আমাদের প্রেরণা ও উদ্দীপনাশক্তি জাগিবে না—এবং প্রেরণাশক্তি না জাগিলে চিন্তাশক্তি ও কর্মপ্রচেষ্ঠা পুনরুজ্জীবিত হইবে না। তাই আদর্শবাদই যুব-আন্দোলনের প্রাণ। আদর্শের চরণে আত্মসমর্পণ করিতে হইবে—ঐ আদর্শের অনুসরণে নিজেকে নিঃশেষে বিলাইয়া দিতে হইবে। আদর্শের চরণে আত্মবলিদান করিতে