পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SRV - বিবিধ প্ৰবন্ধ মনু বলেন, বেদশব্দ হইতে সকলের নাম, কৰ্ম্ম, এবং অবস্থা নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। বেদ, পিতৃ, দেবতা এবং মানুষ্যের চক্ষু ; অশক্য, অপ্ৰমেয়; যাহা বেদ হইতে ভিন্ন, তাহা পরকালে নিস্ফল, বেদ ভিন্ন গ্ৰন্থ মিথ্যা। ভূত ভবিষ্যৎ বৰ্ত্তমান, শব্দ স্পর্শ রূপ গন্ধ, চতুৰ্ব্বৰ্ণ ত্ৰিলোক, চতুরাশ্রম, সকলই বেদ হইতে প্ৰকাশ ; বেদ মনুষ্যের পরম সাধন ; যে বেদজ্ঞ, সেই সৈনাপত্য, রাজ্য, দণ্ডনেতৃত্ব এবং সৰ্ব্বলোকাধিপত্যের যোগ্য। যে বেদজ্ঞ, সে যে আশ্রমেই থাকুক না কেন, সেই ব্রহ্মে লীন হওয়ার যোগ্য। যাহারা ধৰ্ম্ম-জিজ্ঞাসু, বেদই তাহাদের পক্ষে পরম প্রমাণ। বেদ অজ্ঞের শরণ, জ্ঞানীদেরও শরণ। যাহারা স্বৰ্গ বা আনন্ত্য কামনা করে, ইহাই তাহাদিগের শরণ। যে ব্ৰাহ্মণ তিন লোক হত্যা করে, যেখানে সেখানে খায়, তাহার যদি ঋগ্বেদ মনে থাকে, তবে তাহার কোন পাপ হয় না। শতপথ ব্ৰাহ্মণ বলেন, বেদান্তর্গত সৰ্ব্বভূত। বেদ, সকল ছন্দঃ, স্তোম, প্ৰাণ, এবং দেবতাগণের আত্মা । বেদই আছে। বেদ অমৃত । যাহা সত্য, তাহাও বেদ । বিষ্ণপুরাণে আছে, দেবাদির রূপ, নাম, কৰ্ম্ম, প্ৰবৰ্ত্তন, বেদশব্দ হইতে সৃষ্ট হইয়াছিল। অন্যত্র ঐ পুরাণে বিষ্ণুকে বেদময় ও ঋগ্যজুঃসামাত্মক বলা হইয়াছে। মহাভারতে শান্তিপর্বেও আছে যে, বেদশব্দ হইতে সৰ্ব্বভূতের রূপ নাম কৰ্ম্মাদির ऐ९°द्धि । ঋক সংহিতার ও তৈত্তিরীয় সংহিতার মঙ্গলাচরণে সায়নাচাৰ্য্য ও মাধবাচাৰ্য্য লিখিয়াছেন, “বেদ হইতে অখিল জগতের নিৰ্ম্মাণ হইয়াছে।” এইরূপ সৰ্ব্বত্র বেদের মাহাত্ম্য। কোন দেশে কোন ধৰ্ম্মগ্রন্থের, বাইবেল, কোরাণ প্রভৃতি কিছুরই ঈদৃশ মহিমা কীৰ্ত্তিত হয় নাই। এখন জিজ্ঞাস্য এই যে, যে বেদ এইরূপ সকলের পূর্বগামী বা উৎপত্তির মূল, তাহা কোথা হইতে আসিল। এ বিষয়ে মতভেদ আছে। কেহ কেহ বলেন, বেদের কৰ্ত্তা কেহ নাই -এ গ্রন্থ কাহারও প্রণীত নহে, ইহা নিত্য এবং অপৌরুষেয়। অন্যে বলেন যে, ইহা ঈশ্বরপ্রণীত, সুতরাং সৃষ্ট এবং পৌরুষেয়। কিন্তু হিন্দুশাস্ত্রের কি আশ্চৰ্য্য বৈচিত্র্য ! সকলেই বেদ মানেন, কিন্তু বেদের উৎপত্তি সম্বন্ধে কোন দুইখানি শাস্ত্রীয় গ্রন্থের ঐক্য নাই। যথা (১) ঋগ্বেদের পুরুষসূক্তে আছে, বেদপুরুষ যজ্ঞ হইতে উৎপন্ন। (২) অথর্ববেদে আছে, স্তম্ভ হইতে ঋগ যজুষ সাম অপাক্ষিত হইয়াছিল। ( . ) অথর্ববেদে অন্যত্র আছে যে, ইন্দ্ৰ হহঁতে বেদের জন্ম।