পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/২৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গদেশের কৃষক २७१ সম্বন্ধে অনিশ্চয়তা, সেখানে লোকে সংসারধৰ্ম্মে বিরাগী। পরিণয়াদিতে সাধারণ লোকের অনুরাগের ফল প্ৰজাবৃদ্ধি। অতএব ব্রিটিশ শাসনে প্ৰজাবৃদ্ধি হইয়াছে। প্রজাবৃদ্ধির ফল, কৃষিকাৰ্য্যের বিস্তার। যে দেশে লক্ষ লোকের মাত্ৰ আহারোপযোগী শস্যের আবশ্যক, সে দেশে বাণিজ্যের প্রয়োজন বাদে কেবল তদুপযুক্ত ভূমিই কৰ্ষিত হইবে,-কেন না, অনাবশ্যক শস্য-যাহ কেহ খাইবে না, ফেলিয়া দিতে হইবে,--তাহা কে পরিশ্রম স্বীকার করিয়া উৎপাদন করিতে যাইবে ? দেশের অবশিষ্ট ভূমি পতিত বা জঙ্গল বা তদ্রুপ অবস্থাবিশেষে থাকিবে। কিন্তু প্ৰজাবৃদ্ধি হইয়া যখন সেই এক লক্ষ লোকের স্থানে দেড় লক্ষ লোক হয়, তখন আর বেশী ভূমি আবাদ না করিলে চলে না। কেন না, যে ভূমির উৎপন্নে লক্ষ লোকমাত্ৰ প্ৰতিপালিত হইত, তাহার শস্যে দেড় লক্ষ কখন চিরকাল জীবন ধারণ করিতে পারে না। সুতরাং প্রজাবৃদ্ধি হইলেই চাষ বাড়িবে। যাহা পূর্বে পতিত বা জঙ্গল ছিল, তাহা ক্ৰমে আবাদ হইবে। ব্রিটিশ শাসনে প্ৰজাবুদ্ধি হওয়াতে সেইরূপ হইয়াছে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পূর্বের অপেক্ষা এক্ষণে অনেক ভূমি কৰ্ষিত হইতেছে। আর এক কারণে চাষের বৃদ্ধি হইতেছে। সেই দ্বিতীয় কারণ বাণিজ্যবৃদ্ধি। বাণিজ্য বিনিময় মাত্র। আমরা যদি ইংলণ্ডের বস্ত্ৰাদি লই, তবে তাহার বিনিময়ে আমাদের কিছু সামগ্ৰী ইংলণ্ডে পাঠাইতে হইবে, নাহিলে আমরা বস্ত্ৰ পাইব না। আমরা কি পাঠাই ? অনেকে বলিবেন, “টাকা ;” তাহা নহে, সেটি আমাদের দেশীয় লোকের একটি গুরুতর শ্ৰম । সত্য বটে, ভারতবর্ষের কিছু টাকা ইংলণ্ডে যায়,-সেই টাকাটি ভারতব্যাপারে ইংলেণ্ডের মুনফা। সে টাকা ইংলণ্ড হইতে প্ৰাপ্ত সামগ্রীর কোন অংশের মূল্য নহে, যদি বিবেচনা কর, তাহাতেও হানি নাই। অধিকাংশের বিনিময়ে আমরা কৃষিজাত দ্রব্যসকল পঠিাই—যথা, চাউল, রেশম, কার্পাশ, পাট, নীল ইত্যাদি। ইহা বলা বাহুল্য যে, যে পরিমাণে বাণিজ্যবৃদ্ধি হইবে, সেই পরিমাণে এই সকল কৃষিজাত সামগ্রীর আধিক্য আবশ্যক হইবে। সুতরাং দেশে চাষও বাড়িবে। द्धिभि ब्राछ श्छे ग्रा १री) g ७ ८नrलन বাণিজ্য বাড়িতেছে—সুতরাং বিদেশে পাঠাইবার জন্য বৎসর বৎসর অধিক কৃষিজাত সামগ্রীর আবশ্যক হইতেছে, অতএব এ দেশে প্ৰতি বৎসর চাষ বাড়িতেছে। চাষ বৃদ্ধির ফল কি ? দেশের ধনবৃদ্ধি শ্ৰীবৃদ্ধি। যদি পূর্বে ১০০ বিঘা জমী চাষ করিয়া বার্ষিক ১০০ টাকা পাইয়া থাকি, তবে ২০০ বিঘা চাষ করিলে, নৃত্যুনাধিক • ২০০

  • সমাজতত্ত্ববিদেরা বুঝিবেন, এখানে “নৃত্যুনাধিক” শব্দটি ব্যবহার করিবার বিশেষ তাৎপৰ্য্য আছে, কিন্তু সাধারণপাঠ্য এই প্ৰবন্ধে তাহা বুঝাইবার প্রয়োজন নাই।