পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SG8 বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ তৃতীয় পরিচ্ছেদ প্ৰাকৃতিক নিয়ম আমরা জমীদারের দোষ দিই বা রাজার দোষ দিই, ইহা অবশ্য স্বীকার করিতে হইবে যে, বঙ্গদেশের কৃষকের দুর্দশ আজি কালি হয় নাই। ভারতবর্ষীয় ইতর লোকের অবনতি ধারাবাহিক ; যত দিন হইতে ভারতবর্ষের সভ্যতার সৃষ্টি, প্ৰায় তত দিন হইতে ভারতবর্ষীয় কৃষকদিগের দুৰ্দশার সূত্রপাত। পাশ্চাত্যের কথায় বলেন, একদিনে রোমনগরী নিৰ্ম্মিত হয় নাই। এদেশের কৃষকদিগের দুৰ্দশাও দুই এক শত বৎসরে ঘটে নাই। আমরা পূৰ্ব্বপরিচ্ছেদে বলিয়াছি, হিন্দুরাজার রাজ্যকালে রাজা কর্তৃক প্ৰজাপীড়ন হইত না ; কিন্তু তাহাতে এমন বুঝায় না যে, তৎকালে প্ৰজাদিগের বিশেষ সৌষ্ঠব ছিল। এখন রাজার প্রতিনিধিস্বরূপ অনেক জমীদারে প্রজাপীড়ন করেন ; তখন আর এক শ্রেণীর লোকে পীড়িত করিত। তাহারা কে, তাহা পশ্চাৎ বলিতেছি। কি কারণে ভারতবর্ষের প্ৰজা চিরকাল উন্নতিহীন, অদ্য আমরা তাহার অনুসন্ধানে প্ৰবৃত্ত হইব। বঙ্গদেশের কৃষকের অবস্থানুসন্ধানই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু অদ্য যে সকল ঐতিহাসিক বিবরণে আমরা প্ৰবৃত্ত হইতেছি, তাহা যত দূর বঙ্গদেশের প্রতি বৰ্ত্তে, সমুদায় ভারতবর্ষের প্রতি তত দূর বৰ্ত্তে। বঙ্গদেশে তৎসমুদায়ের যে ফল ফলিয়াছে, সমগ্ৰ ভারতে সেই ফল ফলিয়াছে। বঙ্গদেশ ভারতের একটি খণ্ডমাত্ৰ বলিয়া তথায় সেই ফল ফলিয়াছে। এবং সেই ফল কেবল কৃষিজীবীর কপালেই ফলিয়াছে, এমত নহে ; শ্রমজীবিমাত্ৰেই সমভাগে সে ফলভোগী। অতএব আমাদিগের এই প্ৰস্তাব, ভারতীয় শ্রমজীবী প্ৰজামাত্র সম্বন্ধে অভিপ্ৰেত বিবেচনা করিতে হইবে । কিন্তু ভারতীয় শ্রমজীবীর মধ্যে কৃষিজীবী এত অধিক যে, অন্য শ্রমজীবীর অস্তিত্ব এ সকল আলোচনার কালে স্মরণ রাখা না রাখা সমান। জ্ঞানবৃদ্ধিই যে সভ্যতার মূল এবং পরিমাণ, ইহা বকুল কর্তৃক সপ্রমাণ হইয়াছে। বকুল বলেন যে, জ্ঞানিক উন্নতি ভিন্ন নৈতিক উন্নতি নাই। সে কথায় আমরা অনুমোদন করি না । কিন্তু জ্ঞানিক উন্নতি যে সভ্যতার কারণ, এ কথা অবশ্য স্বীকার করিতে হইবে। জ্ঞানের উন্নতি না হইলে সভ্যতার উন্নতি হইবে না। জ্ঞান আপনি জন্মে না ; আতিশয় শ্রমলভ্য। কেহ যদি বিদ্যালোচনায় রত না হয়, তবে সমাজমধ্যে জ্ঞানের প্রকাশ হইবে না। কিন্তু বিদ্যালোচনার পক্ষে অবকাশ আবশ্যক। বিদ্যালোচনার পূর্বে উদরপোষণ চাই ; অনাহারে কেহই জ্ঞানালোচনা করিবে না। যদি সকলকেই আহারান্বেষণে