পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SuS ff&sg প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ७१ কেহ কিছু না বলে, রাজপুরুষেরা সহজেই স্বেচ্ছাচারী হয়েন। স্বেচ্ছাচারী হইলেই আত্মসুখরাত, কাৰ্য্যে শিথিল এবং দুস্ক্রিয়ান্বিত হইতে হয়। অতএব যে দেশের প্রজা নিস্তেজ, নম্র, অনুৎসাহী, অবিরোধী, সেইখানেই রাজপুরুষদিগের ঐরাপ স্বভাবগত অবনতি হইবে। যেখানে প্ৰজা দুঃখী, অন্নবস্ত্রের কাঙ্গাল, আহারোপার্জনে ব্যগ্র, এবং সন্তুষ্টস্বভাব, সেইখানেই তাহারা নিস্তেজ, নম্র, অনুৎসাহী, অবিরোধী। ভারতবর্ষে তাই। সেই জন্য ভারতবর্ষের রাজগণ, মহাভারতকীৰ্ত্তিত বলশালী, ধৰ্ম্মিষ্ঠ, ইন্দ্ৰিয়জয়ী রাজচরিত্র হইতে মধ্যকালের কাব্যনাটকাদিচিত্রিত বলহীন, ইন্দ্ৰিয়াপরবশ, স্ত্রৈণ, অকৰ্ম্মঠ দশাপ্রাপ্ত হইয়া শেষে মুসলমান-হস্তে লুপ্ত হইলেন। যে দেশে সাধারণ প্ৰজার অবস্থা ভাল, সে দেশে রাজপুরুষদিগের এরূপ দুৰ্গতি ঘটে না। তাহারা রাজার দুৰ্ম্মতি দেখিলে, তাহার প্ৰতিদ্বন্দ্বী হইতে পারে এবং হইয়া থাকে। বিরোধেই উভয় পক্ষের উন্নতি। রাজপুরুষগণ অনৰ্থক বিরোধের ভয়ে সতর্ক থাকেন। কিন্তু বিরোধে কেবল যে এই উপকার, ইহা নহে। নিত্য মল্লযুদ্ধে বল বাড়ে। বিরোধে মানসিক গুণসকলের সৃষ্টি এবং পুষ্টি হয়। নির্বিবরোধে তৎসমুদ্ৰায়ের লোপ। শূদ্রের দাসত্বে ক্ষত্রিয়ের ধন এবং ধৰ্ম্মের লোপ হইয়াছিল। রোমে প্লিবিয়ানদিগের বিবাদে, ইংলণ্ডের কমনদিগের বিবাদে প্ৰভুদিগের স্বাভাবিক উৎকর্ষ জন্মিয়াছিল। (গ) ব্ৰাহ্মণ। যেমন অধঃশ্রেণীর প্রজার অবনতিতে ক্ষত্ৰিয়দিগের প্রভুত্ব বাড়িয়া পরিশেষে লুপ্ত হইয়াছিল, ব্ৰাহ্মণদিগেরও তদ্রুপ। অপর তিন বর্ণের অনুন্নতিতে ব্ৰাহ্মণের প্রথমে প্ৰভুত্ব বৃদ্ধি হয়। অপর বর্ণের মানসিক শক্তিহানি হওয়াতে তাহাদিগের চিত্ত উপধৰ্ম্মের বিশেষ বশীভূত হইতে লাগিল। দৌৰ্ব্বল্য থাকিলেই ভয়াধিক্য হয়। উপধৰ্ম্ম ভীতিজাত ; এই সংসার বলশালী অথচ অনিষ্টকারক দেবতাপূর্ণ, এই বিশ্বাসই উপধৰ্ম্ম । অতএব অপর বর্ণক্রয়, মানসিকশক্তিবিহীন হওয়াতে অধিকতর উপধৰ্ম্মপীড়িত হইল ; ব্ৰাহ্মণের উপধৰ্ম্মের যাজক ; সুতরাং তঁহাদের প্রভুত্ব বৃদ্ধি হইল। ব্ৰাহ্মণের কেবল শাস্ত্ৰজাল, ব্যবস্থাজাল বিস্তারিত করিয়া ক্ষত্ৰিয়,বৈশ্য, শূদ্রকে জড়িত করিতে লাগিলেন। মক্ষিকাগণ জড়াইয়া পড়িল-নড়িবার শক্তি নাই। কিন্তু তথাপি উৰ্ণনাভের জাল ফুরায় না। বিধানের অন্ত নাই। এ দিকে রাজশাসনপ্রণালী দণ্ডবিধি দায় সন্ধিবিগ্ৰহ প্রভৃতি হইতে আচমন, শয়ন, বসন, গমন, কথোপকথন, হাস্য, রোদন, এই সকল পৰ্য্যন্ত ব্ৰাহ্মণের রচিত বিধির দ্বারা নিয়মিত হতে লাগিল। “আমরা যেরূপে বলি, সেইরূপে শুইবে, সেইরূপে খাইবে, সেইরূপে বসিবে, সেইরূপে হাঁটবে, সেইরূপে কথা কহিবে,