পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/২৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

აჯახr - u বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ ১৮৫৯ শালের দশ আইনও যে প্ৰজাদিগের বিশেষ মঙ্গলকর, এমত আমরা বলি না। প্ৰজাদিগের যাহী ছিল, তাহা তাহারা আর পাইল না। তাহাদিগের উপর যে সকেল অত্যাচার হইয়া থাকে, তাহা নিবারণের বিশেষ কোন উপায়, এই আইন বা অন্য কোন আইনের দ্বারা হয় নাই। কোরোক-লুটের বিধি সেই প্রকারই আছে। বেশীর ভাগ প্ৰজার খাজানা বাড়াইবার বিশেষ সুপথ হইয়াছে। এ আইনের সাহায্যে যাহার হার বেশী করা যাইতে পারে না, বঙ্গদেশে এমত কৃষক অতি অল্পই আছে। তথাপি এইটুকু মাত্ৰ প্ৰজার পক্ষতা দেখিয়া প্রজাদ্বেষী, স্বার্থপর কোন কোন জমীদার কতই কোলাহল করিয়াছিলেন । অদ্যাপি করিতেছেন । আমরা দেখাইলাম যে, ব্রিটিশ রাজ্যকালে ভূমিসংক্রান্ত যে সকল আইন হইয়াছে, তাহাতে পদে পদে প্ৰজার অনিষ্ট হইয়াছে। প্ৰতি বারে দুর্বল প্ৰজার বলা হরণ করিয়া আইনকারক বলবান জমীদারের বলবৃদ্ধি করিয়াছেন। তবে জমীদার প্রজাপীড়ন না করিবেন কেন ? ইচ্ছাপূর্বক ব্রিটিশ রাজপুরুষেরা প্ৰজার অনিষ্ট করেন নাই। র্তাহারা প্ৰজার পরম মঙ্গলাকাজক্ষী । দেওয়ানী পাইয়া অবধি এ পৰ্য্যন্ত কিসে সাধারণ প্ৰজার হিত হয়, ইহাই র্তাহাদিগের অভিপ্রায়, এবং ইহাই তাহাদিগের চেষ্টা। দুর্ভাগ্যবশতঃ তাহারা বিদেশী ; এ দেশের অবস্থা সবিশেষ অবগত নহেন, সুতরাং পদে পদে ভ্ৰমে পতিত হইয়াছেন। ভ্ৰমে পতিত হইয়া এই মহৎ অনিষ্টকর বিধি সকল প্ৰচারিত করিয়াছেন। কিন্তু ভ্রমবশতই হউক, আর যে কারণেই হউক, প্ৰজাপীড়ন হইলেই রাজার দোষ দিতে হয়। কিন্তু ইহা অপেক্ষা আর একটি গুরুতর কথা আছে। ইংরাজের দোর্দণ্ড প্ৰতাপ-- সে প্ৰতাপে সমগ্ৰ আসিয়াখণ্ড সঙ্কুচিত ; তবে ক্ষুদ্রজীবী জমীদারের দৌরাত্ম্য নিবারণ হয় না কেন ? বহুদূরবাসী আবিসিনিয়ার রাজা জন কয়েক ইংরাজকে পীড়ন করিয়াছিলেন বলিয়া তাহার রাজ্য লোপ হইল। আর রাজপ্ৰতিনিধির অট্টালিকার ছায়াতলে লক্ষ লক্ষ প্ৰজার উপর পীড়ন হইতেছে, তাহার কোন প্ৰতীকার হয় না কেন ? জমীদার। প্ৰজা ধরিয়া আনিতেছেন, কয়েদ করিতেছেন, মারিয়া টাকা আদায় করিতেছেন, তাহার ফিশল লুটিতেছেন, ভূমি কাড়িয়া লইতেছেন, সর্বস্বান্ত করিতেছেন, তাহার প্রতীকার হয় না কেন ? কেহ বলিবেন, তাহার জন্য রাজপুরুষেরা আইন করিয়াছেন, আদালত করিয়াছেন, তবে গবৰ্ণমেণ্টের ক্রটি কি ? আমাও সেই কথা জিজ্ঞাসা করি। আইন আছে-সে আইনে অপরাধী জমীদার দণ্ডনীয় হন না কেন ? আদালত আছে—সে আদালতে দোষী