পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/৩৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V)\9V বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ পারসিক, রোমক, হিন্দু, সকলই আৰ্য্য। আবার ভারতবর্ষের সকল অধিবাসী এ নামের অধিকারী হয় না ; হিন্দুরা আৰ্য বলিয়া খ্যাত, কিন্তু কোল, ভীল, সঁওতাল আৰ্য নহে। তবে আৰ্য শব্দের অর্থ কি ? এই প্ৰভেদের কারণ কি ? কতকগুলি দেশীয় লোক আৰ্য্যবংশীয়, কতকগুলি অনাৰ্য্যবংশীয়, এরূপ বিবেচনা করিবার কারণ কি ? আৰ্য্য কাহারা,-কোথা হইতেই বা আসিল ? অনাৰ্য্য কাহারা, কোথা হইতেই বা আসিল ? এক দেশে দুইপ্ৰকার মনুষ্যবংশ কেন ? আৰ্য্যের দেশে অনাৰ্য্য আসিয়া বাস করিয়াছে, না অনাৰ্য্যের দেশে আৰ্য্য আসিয়া বাস করিয়াছে ? বাঙ্গালার ইতিহাসের এই প্ৰথম কথা । ইহার মীমাংসা জন্য ভাষাবিজ্ঞানের আশ্রয় গ্ৰহণ করিতে হয়। অতএব ভাষাবিজ্ঞানের মূলতত্ত্বের ব্যাখ্যা এইখানে আবশ্যক হইল। ভাষা কিরূপে উৎপন্ন হইল, তদ্বিষয়ে মতভেদ আছে। কেহ কেহ বলেন, ইহা ঈশ্বরপ্রদত্ত। সকলই তা ঈশ্বরপ্রদত্ত। ঈশ্বর বৃক্ষের সৃষ্টিকৰ্ত্তা, কিন্তু গাছ গড়িয়া কাহারও বাগানে পুতিয়া দিয়া যান না। তেমনি তিনিই ভাষার সৃষ্টিকৰ্ত্তা, কিন্তু তিনি যে ভাষাগুলি তৈয়ারি করিয়া-বিভক্তি, লিঙ্গ, কারকাদিবিশিষ্ট করিয়া-দেশে দেশে মনুষ্যকে শিখাইয়া বেড়ান নাই, ইহা অনায়াসেই অনুমিত হইতে পারে। দ্বিতীয় মত এই যে, মনুষ্যগণ সমবেত হইয়া পরামর্শ করিয়া ভাষা সৃষ্টি করিয়াছে। এ মত গ্ৰহণ করিতে হইলে অনুমান করিতে হয় যে, দশজন একত্র বসিয়া যুক্তি করিয়াছে যে, এসো, আমরা ফুলফলযুক্ত পদার্থগুলিকে বৃক্ষ বলিতে আরম্ভ করি—যাহারা উড়িয়া যায়, তাহদের পাখী বলিতে আরম্ভ করি। এরূপ যুক্তির জন্য ভাষার প্রয়োজন, এ মতে ভাষা না থাকিলে ভাষার সৃষ্টি হইতে পারে না। সুতরাং এ মতও অবৈজ্ঞানিক ও অগ্ৰাহ। তৃতীয় মত এই যে, ভাষা অনুকৃতিমূলক। এই মতই এখন প্রচলিত। প্রাকৃতিক বস্তুসকল শব্দ করে। নদী কল কল করে, মেঘ গর গর করে, সিংহ হুঙ্কার করে, সৰ্প ফোস ফোস করে। আমরাও যে সকল কাজ করি, তাহারও শব্দ আছে। বাঙ্গালী “সপ সপ” করিয়া খায়, “গপ গপ” করিয়া গেলে ; “হন হন” করিয়া চলিয়া যায়, “দুপ দাপ” করিয়া লাফায়। এইরূপ নৈসৰ্গিক শব্দানুকৃতিই ভাষার প্রথম সূত্র। গাছের ডাল প্ৰভৃতি ভাঙ্গার শব্দ হইতে “মৃ”; মন্দগমনের সময়ে ঘর্ষণজনিত শব্দ হইতে “স্র”; নিশ্বাসের শব্দ হইতে “অস”। সত্য বটে, অনেক সামগ্ৰী আছে যে, তাহার কােন শব্দ নাই ; কিন্তু সে সকল স্থলে মনুষের শব্দানুকরণ প্রবৃত্তি বিমুখ হয় না। আলোর শব্দ নাই, কিন্তু আমরা আজিও বলি, “আলো