পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छेख्ब्राब्रिङ R6t পরস্পর প্রতিঘাতসন্ধুল উত্তালতরঙ্গ সরিৎসঙ্গম দেখা যাইতেছে। দক্ষিণে শ্যামচ্ছবি অনন্ত কাননশ্রেণী চলিয়া গিয়াছে। চারি দিকে সীতার পূর্বসহবাসচিহ্ন সকল বিদ্যমান রহিয়াছে। তথায় একটি কদলীবনমধ্যবৰ্ত্তী শিলাতলে, পূর্বপ্রবাসকালে, রাম সীতার সঙ্গে শয়ন করিতেন ; সেইখানে বসিয়া সীতা হরিণশিশুগণকে তৃণ খাওয়াইতেন ; এখনও হরিণের সেই প্ৰেমে সেইখানে ফিরিয়া বেড়াইতেছে। বাসন্তী সেইখানে রামকে বসিতে বলিলেন ; রাম সেখানে না বসিয়া, অন্যত্র উপবেশন করিলেন। সীতা, পূর্বে পঞ্চবটীবাসকালে একটি ময়ুরশিশু প্ৰতিপালন করিয়াছিলেন। একটি কদম্ববৃক্ষ সীতা স্বহস্তে রোপণু করিয়া, স্বয়ং বদ্ধিত করিয়াছিলেন। রাম দেখিলেন যে, সেই কদম্ববৃক্ষে দুই একটি নবকুসুমোদগম হইয়াছে। তদুপরি আরোহণ করিয়া সীতাপালিত সেই ময়ুরটি নৃত্যান্তে ময়ুরী সঙ্গে রবী করিতেছিল। বাসন্তী রামকে সেই ময়ুরটি দেখাইলেন। দেখিয়া রামের মনে পড়িল, সীতা তাহাকে করতালি দিয়া নাচাইতেন, নাচাইবার সময়ে তালের সহিত সীতার চক্ষুও পল্লবমধ্যে ঘুরিত। এইরূপে বাসস্তী রামকে পূর্বস্মৃতিপীড়িত করিয়া,-সখীনির্বাসনজনিত রাগেই এইরূপ পীড়িত করিয়া, প্ৰথমে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মহারাজ ! কুমার লক্ষ্মণ ভাল আছেন ত ?” কিন্তু সে কথা রামের কানে গেল না—তিনি সৗতুকিরকমলবিকীর্ণ জলে পরিবদ্ধিত বৃক্ষ, সীতাকরকমলবিকীর্ণ নীবারে পুষ্ট পক্ষী, সীতাকরকমলবিকীর্ণ তৃণে প্রতিপালিত হরিণগণকেই দেখিতেছিলেন । বাসন্তী আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “মহারাজ ! কুমার লক্ষ্মণ কেমন আছেন ?” এবার রাম কথা শুনিতে পাইলেন, কিন্তু ভাবিলেন, বাসন্তী “মহারাজ !” বলিয়া সম্বোধন করিলেন কেন ? এ ত নিম্প্রণয় সম্বোধন । আর কেবল কুমার লক্ষ্মণের কথাই জিজ্ঞাসিলেন, তবে বাসন্তী সীতা বিসৰ্জনবৃত্তান্ত জানেন । রাম প্রকাশ্যে কেবল বলিলেন, “কুমারের কুশল,” এই বলিয়া নীরবে রোদন করিতে লাগিলেন। বাসন্তী তখন মুক্তকণ্ঠ হইয়া কহিলেন, “দেব ! এত কঠিন হইলে কি প্রকারে ? ত্বং জীবিতং ত্বমসি মে হৃদয়ং দ্বিতীয়াং ত্বং কৌমুদী নয়নয়োরমৃতং ত্বমঙ্গে । তুমি আমার জীবন, তুমি আমার দ্বিতীয় হৃদয়, তুমি নয়নের কৌমুদী, অঙ্গে তুমি আমার অমৃত,—এইরূপ শত শত প্রিয় সম্বোধনে যাহাকে ভুলাইতে, তাহাকে-” বলিতে বলিতে সীতাম্মুতিমুগ্ধা বাসন্তী আর বলিতে পারিলেন না ; অচেতন হইলেন। রাম তাহাকে আশ্বস্তা করিলেন। চেতনা পাইয়া বাসন্তী কহিলেন, “আপনি কেমন করিয়া এ কাজ করিলেন ?”