পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্ৰবন্ধ wOb” গ্রন্থের প্রত্যেক অংশ পৃথক পৃথক করিয়া পাঠককে দেখাইয়াছি। এরূপে গ্রন্থের প্রকৃত দোষগুণের ব্যাখ্যা হয় না | এক একখানি প্রস্তর পৃথক পৃথক করিয়া দেখিলে তাজমহলের

    • 1 ܝ ܝ . ܫ . . r *ܫ * • - - - ܚܣܚܡܫܝܚܝ-ܝ- --arru -

ܫܒ ܝ . আর যমল কুশীলব আমারই পুত্র, আমি তাহা জানি ; কিন্তু আপনি আমাকে ক্ষমা করিবেন। আমি যে কারণে জানকীকে ত্যাগ করিয়াছি, সেই লোকাপবাদ আমার পক্ষে সর্বাপেক্ষা বলবান। জগন্মধ্যে পবিত্ৰা জানকীতে আমার প্রীতি থাকুক । অনন্তর সীতা-শপথ বিষয়ে রামেরু অভিপ্ৰায় জানিয়া দেবগণ ব্ৰহ্মাকে পুরোবৰ্ত্তী করিয়া সেই স্থলে সমাগত হইলেন এবং আদিত্যগণ বসুগণ রুদ্রগণ বিশ্বদেবগণ বায়ুগণ সকল সাধ্যগণ দেবগণ সকল পরমর্ষিগণ নাগমন-প্ৰক্ষিগণ সকলেই হৃষ্টান্ত:করণ হইয়া সে স্থলে আগমন করিলেন । রাম সমাগত সেই সকল দেবগণ ঋষিগণকে দেখিয়া পুনৰ্বার বাল্মীকিকে সম্বোধন করিয়া বলিতে লাগিলেন। হে মুনিশ্রেষ্ঠ ! পবিত্ৰ ঋষিবাক্যে আমার প্রত্যয় আছে। জগতে বিশুদ্ধশালিনী সীতার প্রতি আমার গ্ৰীতি থাকুক ; কিন্তু সীতাশপথ দর্শন জন্য কৌতুহলাক্রান্ত হইয়া সকলে সমাগত হইয়াছেন। তখন দিব্য গন্ধবিশিষ্ট মনােহর এবং সৰ্ব্বপাপপুণ্য-সাক্ষী পবিত্র বায়ু প্রবাহিত হইয়া সেই জনবৃন্দকে আহ্বলাদিত করিল। পূর্বকালে সত্যযুগের ন্যায় সেই 'আশ্চৰ্য্য অচিন্তনীয় ব্যাপার, সকল রাষ্ট্র হইতে সমাগত জনমণ্ডলী সমাহিত হইয়া দেখিতে লাগিল। কাষায়-বস্তুপরিধান সীতা সকলকে সমাগত দেখিয়া অধোমুখী, অধোদৃষ্টি এবং কৃতাঞ্জলি হইয়া এইরূপ কহিতে লাগিলেন। যদি আমি মনেতেও রাম ভিন্ন অন্য চিন্তা না করিয়া থাকি, তবে পৃথিবীদেবী আমাকে বিবর প্রদান করুন। যদি আমি কায়মনোবাক্যে রামাৰ্চন করিয়া থাকি, তবে পৃথিবীদেবী আমাকে বিবর প্রদান করুন। “আমি রাম ভিন্ন জানি না,” আমার এই বাক্য যদি সত্য হয়, তবে পৃথিবীদেবী আমাকে বিবর প্রদান করুন। বৈদেহী এইরূপ শপথ করিলে, তখন অমিতবিক্ৰম, দিব্য রত্নালিস্কৃত নাগগণ কর্তৃক মস্তকে বাহিত, দিব্যাকান্তি, দিব্য সিংহাসন রসাতল হইতে সহসা আবিভূতি হইল এবং সেই স্থলে পৃথিবীদেবী দুই বাহুদ্বারা সীতাকে গ্ৰহণ করিয়া এবং স্বাগত প্রশ্নে অভিনন্দন করিয়া সেই উত্তমাসনে উপবেশন করাইলেন। সিংহাসনারূঢ়া সেই সীতাকে রসাতলে প্ৰবেশ করিতে দেখিয়া তদুপরি স্বৰ্গ হইতে পুষ্পবৃষ্টি হইতে লাগিল এবং দেবগণের অতি বিপুল সাধুবাদ হঠাৎ উত্থিত হইল। সীতার রসাতল প্ৰবেশ দেখিয়া অন্তরীক্ষগত দেবগণ হৃষ্টান্ত:করণ হইয়া, “সীতা সাধু সীতা সাধু যাহার এইরূপ চরিত্র” ইত্যাদি নানাপ্রকার বাক্য কহিতে লাগিলেন। যজ্ঞস্থলগত সেই সকল মুনিগণ ও মনুষ্যশ্রেষ্ঠ রাজগণ এই অদ্ভুত ঘটনাহেতু বিস্ময় হইতে বিরত হইতে পারিলেন না। তৎকালে আকাশে, ভূতলে স্থাবর জঙ্গম পদার্থ ও মহাকায় দানবগণ এবং পাতালে নাগগণ সকলেই হৃষ্টান্ত:করণ হইয়াছিলেন। তাহারা হৃষ্টমনে শব্দ করিতে লাগিলেন ; কাহারা বা ধ্যানস্থ হইলেন, কাহারাও বা রামকে দেখিতে লাগিলেন এবং কেহ কেহ বা নিঃসংজ্ঞা হইয়া সীতাকে অবলোকন করিতে লাগিলেন। এইরূপে সমাগত, সেই সকল ঋষি প্রভৃতির সীতার রসাতল প্ৰবেশ দেখিয়া এই প্রকার সমাগম হইয়াছিল এবং সেই মুহূৰ্ত্তে সমুদ্রায় জগৎ সমকালেই মােহিত হইয়াছিল।