পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( দ্ৰৌপদী কি প্রাচীন, কি আধুনিক, হিন্দুকাব্য সকলের নায়িকাগণের চরিত্র এক ছাঁচে ঢালা দেখা যায়। পতিপরায়ণা, কোমলপ্ৰকৃতিসম্পন্না, লজ্জাশীল, সহিষ্ণুতা গুণের বিশেষ অধিকারিণী-ইনিই আৰ্য্যসাহিত্যের আদর্শস্থলাভিষিক্তা। এই গঠনে বৃদ্ধ বাল্মীকি বিশ্বমনোমোহিনী জনকদুহিতাকে গড়িয়াছিলেন। সেই অবধি আৰ্য্য নায়িকা সেই আদর্শে গঠিত হইতেছে। শকুন্তলা, দময়ন্তী, রত্নাবলী প্ৰভৃতি প্ৰসিদ্ধ নায়িকাগণ—সীতার অনুকরণ মাত্র । অন্য কোন প্ৰকৃতির নায়িক যে আৰ্য্যসাহিত্যে দেখা যায় না, এমত কথা বলিতেছি না-কিন্তু সীতানুবৰ্ত্তিনী নায়িকারই বাহুল্য। আজিও যিনি সস্তা ছাপাখানা পাইয়া নবেল নাটকাদিতে বিদ্যা প্ৰকাশ করিতে চাহেন, তিনিই সীতা গড়িতে বসেন। ইহার কারণও দুরনুমেয় নহে। প্রথমতঃ সীতার চরিত্রটি বড় মধুর, দ্বিতীয়তঃ এই প্ৰকার স্ত্রীচরিত্ৰই আৰ্য্যজাতির নিকট বিশেষ প্ৰশংসিত, এবং তৃতীয়তঃ আৰ্য্যস্ত্রীগণের এই জাতীয় উৎকৰ্ষই সচরাচর আয়ত্ত । একা দ্রৌপদী সীতার ছায়াও স্পর্শ করেন নাই। এখানে মহাভারতকার অপূর্ব নূতন সৃষ্টি প্রকাশিত করিয়াছেন। সীতার সহস্ৰ অনুকরণ হইয়াছে, কিন্তু দ্রৌপদীর অনুকরণ হইল না। সীতা সতী, পঞ্চপতিক দ্রৌপদীকেও মহাভারতকার সতী বলিয়াই পরিচিত। করিয়াছেন ; কেন না, কবির অভিপ্ৰায় এই যে, পতি এক হৌক, পাচ হৌক, পতিমাত্র ভজনাই সতীত্ব। উভয়েই পত্নী ও রাজ্ঞীর কৰ্ত্তব্যানুষ্ঠানে অক্ষুন্নমতি, ধৰ্ম্মনিষ্ঠা এবং গুরুজনের বাধ্য। কিন্তু এই পৰ্য্যন্ত সাদৃশ্য। সীতা রাজ্ঞী হইয়াও প্রধানত: কুলবধূ; দ্রৌপদী কুলবধু হইয়াও প্রধানতঃ প্ৰচণ্ড তেজস্বিনী রাজ্ঞী। সীতায় স্ত্ৰীজাতির কোমল গুণগুলিন পরিস্ফুট, দ্রৌপদীতে স্ত্রীজাতির কঠিন গুণসকল প্ৰদীপ্ত। সীতা রামের যোগ্য। জায়া, দ্রৌপদী ভীমসেনেরই সুযোগ্য বীরেন্দ্রাণী। সীতাকে হরণ করিতে রাবণের কোন কষ্ট হয় নাই, কিন্তু রক্ষোব্রাজ লঙ্কেশ যদি দ্রৌপদীহরণে আসিতেন, তবে বোধ হয়, হয় কীচকের ন্যায় প্রাণ হারাইতেন, নয় জয়দ্রথের ন্যায়, দ্রৌপদীর বাহুবলে ডুমে গড়াগড়ি ८िउन ।