পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sob- বিবিধ প্ৰবন্ধ প্ৰমাণ ঐ গ্রন্থমধ্যে আছে। ঐ সকল দর্শনের মত সাংখ্যপ্ৰবচনে খণ্ডন করা দেখা যায় । তদ্ভিন্ন সাংখ্যকারিকা, তত্ত্বসমাস, ভোজবাৰ্ত্তিক, সাংখ্যাসার, সাংখ্যপ্ৰদীপ, সাংখ্যাতত্ত্বপ্ৰদীপ৷ ইত্যাদি গ্ৰন্থ এবং এই সকল গ্রন্থের ভাষ্য টীকা প্রভৃতি বহুল গ্ৰন্থ অপেক্ষাকৃত অভিনব । কপিল অর্থাৎ সাংখ্যদর্শনের প্রথম অধ্যাপকের যে মত, তাহাই আমাদিগের আদরণীয় ও সমালোচ্য ; এবং যাহা কাপিল সূত্ৰ বলিয়া চলিত, তাহাই আমরা অবলম্বন করিয়া, অতি সংক্ষেপে সাংখ্যদর্শনের স্থূল উদ্দেশ্য বুঝাইয়া দিবার যত্ন করিব। আমরা যাহা কিছু বলিতেছি, তাহাই যে সাংখ্যের মত, এমত বিবেচনা কেহ না করেন। যাহা কিছু বলিলে সাংখ্যের মত ভাল করিয়া বুঝা যায়, আমরা তাহাই বলিব। কতকগুলি বিজ্ঞ লোকে বলেন, এ সংসার সুখের সংসার। আমরা সুখের জন্য এ পৃথিবীতে প্রেরিত হইয়াছি। যাহা কিছু দেখি, জীবের সুখের জন্য সৃষ্টি হইয়াছে। জীবের সুখ বিধান করিবার জন্যই সৃষ্টিকৰ্ত্ত জীবকে সৃষ্ট করিয়াছেন। সৃষ্ট জীবের মঙ্গলার্থ সৃষ্টিমধ্যে কত কৌশল কে না দেখিতে পায় ? আবার কতকগুলি লোক আছেন, তাহারাও বিজ্ঞ—র্তাহারা বলেন, সংসারে সুখ ত কই দেখি না-দুঃখেরই প্ৰাধান্য । সৃষ্টিকৰ্ত্তা কি অভিপ্ৰায়ে জীবের সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহা বলিতে পারি না—তােহা মনুষ্যবুদ্ধির বিচাৰ্য্য নহে-কিন্তু সে অভিপ্ৰায় যাহাঁই হউক, সংসারে জীবের সুখের অপেক্ষা অসুখ অধিক । তুমি বলিবে, ঈশ্বর যে সকল নিয়ম অবধারিত করিয়া দিয়াছেন, সেগুলি রক্ষা করিয়া চলিলেই কোন দুঃখ নাই, নিয়মের লঙ্ঘনপৌনঃপুন্যেই এত দুঃখ । আমি বলি, যেখানে ঈশ্বর এমন সকল নিয়ম করিয়াছেন যে, তাহা অতি সহজেই লঙ্ঘন করা যায়, এবং তাহা লঙ্ঘনের প্রবৃত্তিও অতি বলবতী করিয়া দিয়াছেন, তখন নিয়ম লঙ্ঘন ব্যতীত নিয়ম রক্ষা যে তঁাহার অভিপ্ৰায়, এ কথা কে বলিবে ? মাদকসেবন পরিণামে মনুষ্যের অত্যন্ত দুঃখদায়ক—তবে মাদক সেবনের প্রবৃত্তি মনুষ্যের হৃদয়ে রোপিত হইয়াছে কেন ? এবং মাদকসেবন এত সুসাধ্য এবং আশুসুখকর কেন ? কতকগুলি নিয়ম এত সহজে লঙ্ঘনীয় যে, তাহা লঙ্ঘন করিবার সময় কিছুই জানিতে পারা যায় না । ডাক্তার আঙ্গস স্মিথের পরীক্ষায় সপ্ৰমাণ হইয়াছে যে, অনেক সময়ে মহৎ অনিষ্টকারী কাৰ্ব্বণিক আসিড-প্রধান বায়ু নিশ্বাসে গ্ৰহণ করিলে আমাদের কোন কষ্ট হয় না। বসন্তাদি রোগের বিষবীজ কখন আমাদিগের শরীরে প্রবেশ করে, তাহা আমরা জানিতেও পারি না । অনেকগুলি নিয়ম এমন আছে যে, তাহার উল্লঙ্ঘনে আমরা সর্বদা কষ্ট পাইতেছি ; কিন্তু সে নিয়ম কি, তাহা আমাদিগের জানিবার শক্তি নাই। ওলাউঠা রোগ কেন জন্মে, তাহা আমরা এ পৰ্য্যন্ত জানিতে পারিলাম না। অথচ লক্ষ লক্ষ লোক প্ৰতি বৎসর ইহাতে কত দুঃখ পাইতেছে। যদি নিয়মটি লঙ্ঘনের ক্ষমতা