পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

नां२थंJa6 SSv) দুইটি পৃথক উদ্দেশ্যানুসন্ধানে এক পথেই যাত্ৰা করিলেন। পাশ্চাত্যেরা শক্তি পাইয়াছেন—আমরা কি মুক্তি পাইয়াছি ? বস্তুতঃ এক যাত্রার যে পৃথক ফল হইয়াছে, তাহাতে সন্দেহ নাই । ইউরোপীয়েরা শক্তি-অনুসারী, ইহাই ভঁাহাদিগের উন্নতির মূল। আমরা শক্তির প্রতি যত্নহীন, ইহাই আমাদিগের অবনতির মূল। ইউরোপীয়দিগের উদ্দেশ্য ঐহিক ; তঁাহারা ইহকালে জয়ী | আমাদিগের উদ্দেশ্য পারিত্রিক—তাই ইহকালে আমরা জয়ী হইলাম না । পরকালে হইব কি না, তদ্বিযয়ে মতভেদ আছে । কিন্তু জ্ঞানেই মুক্তি, এ কথা সত্য হইলেও ইহার দ্বারা ভারতবর্ষের পরম লাভ হইয়াছে বলিতে হইবে । প্ৰাচীন বৈদিক ধৰ্ম্ম ক্রিয়াত্মক ; প্ৰাচীন আৰ্য্যের প্রাকৃতিক শক্তির পূজা একমাত্র মঙ্গলোপায় বলিয়া জানিতেন । প্রাকৃতিক শক্তিসকল অতি প্ৰবল, স্থির, আশাসনীয়, কখন মহামঙ্গলকর, কখন মহৎ অমঙ্গলের কাবণ দেখিয়া প্ৰথম জ্ঞানীরা তাহাদিগকে ইন্দ্ৰ, বকণ, মরুৎ, অগ্নি প্রভৃতি দেবতা কল্পনা করিয়া ভঁাহাদিগের স্তুতি এবং উপাসনা করেন । ক্রমে তাহাদিগের গ্ৰীত্যৰ্থ যাগ যজ্ঞাদির বড় প্ৰবলত হইল। অবশেষে সেই সকল যাগ যজ্ঞাদিই মানুষ্যের প্রধান কাৰ্য্য এবং পারিত্রিক সুখের একমাত্র উপায় বলিয়া, লোকের একমাত্র অনুষ্ঠেয় হইয়া পড়িল । শাস্ত্ৰসকল কেবল তৎসমুদায়ের আলোচনার্থ সৃষ্ট হইল—প্রকৃত জ্ঞানের প্রতি আৰ্য্যজাতির তাদৃশ মনোযোগ হইল না। বেদের সংহিতা, ব্ৰাহ্মণ, উপনিষৎ, আরণ্যক এবং সূত্ৰগ্ৰন্থসকল কেবল ক্রিয়াক্ষলাপের কথায় পরিপূর্ণ। যে কিছু প্রকৃত জ্ঞানের চর্চা হইত, তাহা কেবল বেদের আনুষঙ্গিক বলিয়াই । সে সকল শাস্ত্ৰ বেদাঙ্গ বলিয়া খ্যাত হইল। জ্ঞান এইরূপে ক্রিয়ার দাসত্বশৃঙ্খলে বদ্ধ হওয়াতে তাহার উন্নতি হইল না । কৰ্ম্মজন্য মোক্ষ, এই বিশ্বাস ভারতভূমে অপ্রতিহত থাকাতেই এরূপ ঘটিয়াছিল। প্রকৃত জ্ঞানের আলোচনার অভাবে বেদাভক্তি আরও প্রবলা হইল। মনুষ্যচিত্তের স্বাধীনতা একবারে লুপ্ত হইতে লাগিল। মনুস্য বিবেকাশূন্য মন্ত্ৰমুগ্ধ শৃঙ্খলবদ্ধ পশুবৎ হইয়া উঠিল। সাংখ্যকার বলিলেন, কৰ্ম্ম অর্থাৎ হোম যাগাদির অনুষ্ঠান পুরুষাৰ্থ নাহে । জ্ঞানই পুরুষাৰ্থ । জ্ঞানই মুক্তি । কৰ্ম্মপীড়িত ভারতবর্ষ সে কথা শুনিল । SG