পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SCO বিবিধ প্ৰবন্ধ “কৃষকদিগের গৃহে বীজ ও অন্নাদির ত অসম্ভাব নাই ? আবশ্যক হইলে তা পাদিক বৃদ্ধিতে অনুগ্রহ স্বরূপ শতসংখ্যক ঋণ দান করিয়া থাকেন ?” এক্ষণে এই নিয়মের অভাবে এ দেশের কৃষকেরা মহাজনের নিকট বিক্রীত । মহাজনের নিকটেও সকলে সকল সময়ে পায় না-অনেকেই অন্নাভাবে শীর্ণ-বীজাভাবে ভরসাশূন্য। যে পায়, সেও দ্বিীপাদ বৃদ্ধিতে নহিলে পায় না। অনেকে বলিবেন যে, যে অর্থশাস্ত্ৰ অনবগত, সেই রাজাকে মহাজানি করিতে পরামর্শ দিবে-রাজার ব্যবসায়, সমাজের অনিষ্টকারক। অর্থশাস্ত্ৰঘটিত যে আপত্তি, তাহা আমরা অবগত আছি এবং মহাভারতকারও অবগত ছিলেন । এই জন্যই নারদের ঐ বাক্যমধ্যেই তিনটি গুরুতর নিয়ম সন্নিবিষ্ট আছে। প্রথম-"আবশ্যক হইলে’ ঋণ দিতে বলিতেছেন-ইহার অর্থ যে, যাহাকে না দিলে চলে না, তাহাকেই দিবেন। অতএব যে মহাজনের নিকট ঋণ পাইতে পারিবে, তাহাকে ঋণ দেওয়া এই কথায় প্রতিষিদ্ধ হইল । সুতরাং রাজা ব্যবসায়ী হইলেন না। যাহাকে রাজা না দিলে সে দুৰ্দশাগ্ৰস্ত হইবে, তাহাকেই দিবেন। দ্বিতীয়তঃ “অনুগ্ৰহস্বরূপ” দিবেনঅর্থাৎ ব্যবসায়ীর ন্যায় লাভাকাঙ্ক্ষায় দিবেন না । তবে পাদিক বুদ্ধির কথা কেন ? এ নিয়ম না করিলে যে সে নিম্প্রয়োজনেও ঋণ লইবার সম্ভাবনা-বঞ্চক জাতি সৰ্ব্বত্রই আছে । আর ঋণ দিলেই কতক আদায় হয়, কতক আদায় হয় না। যদি বৃদ্ধির নিয়ম না। থাকে, তবে রাজাকে ক্ষতিগ্ৰস্ত হইতে হয়। ক্ষতি স্বীকার করিয়া রাজকোষ হইতে ঋণ দিতে হইলে রাজ্য চলা ভার। তৃতীয়তঃ “শতসঙ্খ্যক” ঋণ দিবে-ইহার উদ্ধ দিবে না। অর্থাৎ প্ৰজার জীবননির্বাহার্থে যে পৰ্য্যন্ত প্ৰয়োজন, তাহাই রাজা ঋণস্বরাপ দিতে পারেন। ততোধিক ঋণদান ব্যবসায়ীর কাজ। এই তিনটি নিয়মের দ্বারা অর্থশাস্ত্রবেত্তাদিগের আপত্তির মীমাংসা হইতেছে। প্রাচীন হিন্দুরা অর্থশাস্ত্ৰ বিলক্ষণ বুঝিতেন। নিম্নোদ্ধত নীতি, ইংরেজেরা এ পৰ্য্যন্ত শিখিলেন না । না শিখাতে র্তাহাদিগের ক্ষতি হইতেছে :- “হে মহারাজ ! যথাকলে গাত্ৰোত্থানপূর্বক বেশভূষা সমাধান করিয়া, কালজ্ঞ মন্ত্ৰিগণে পরিবৃত হইয়া, দর্শনাথী প্ৰজাগণকে ত দর্শন প্ৰদান করেন ?” যে রাজাকে প্ৰজাগণ কখন দেখিতে পায় না।--তঁাহার প্রতি প্ৰজাদিগের অনুরাগ সঞ্চার হয় না ; বিশেষতঃ এ দেশের লোকের স্বভাব এই । আর রাজদর্শন প্ৰজাগণের দুর্লভ হইলে, তাহাদিগের সকলপ্রকার দুঃখ ও প্রকৃত অবস্থা রাজা বা রাজপুরুষেরা কখন জানিতে পারেন না