পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ケ বিবিধ প্ৰবন্ধ তেমনি মাধুৰ্য্যপরিপূর্ণ হয় ; বীভৎসাদি রসে কালিদাস সেই জন্য সফল হয়েন না । ভবভূতি বাছিয়া বাছিয়া মধুর সামগ্ৰী সকল একত্রিত করেন না ; যাহা বৰ্ণনীয় বস্তুর প্রধানাংশ বলিয়া বোধ করেন, তাহাই অঙ্কিত করেন । দুই চারিটা স্কুল কথায় একটা চিত্র সমাপ্ত করেন—কালিদাসের ন্যায় কেবল বসিয়া বসিয়া তুলি ঘসেন না ; কিন্তু সেই দুই চারিটা কথায় এমন একটু রস ঢালিয়া দেন যে, তাহাতে চিত্র অত্যন্ত সমুজ্জল, কখন মধুর, কখন ভয়ঙ্কর, কখন বীভৎস হইয়া পড়ে। মধুরে কালিদাস অদ্বিতীয়—উৎকট ভবভূতি । উপরে উত্তরচরিত্যের প্রথমাঙ্ক হইতে উদাহরণস্বরূপ কতকগুলিন বর্ণনা উদ্ধত হইয়াছে,—যথা, রামচন্দ্র ও জানকীর পরস্পরের বর্ণিত বরকন্যা রূপ। ভবভূতির বর্ণনাশক্তির বিশেষ পরিচয়-দ্বিতীয় ও তৃতীয়াঙ্কে জনস্থান এবং পঞ্চবটী এবং ষষ্ঠাক্ষে কুমারদিগের যুদ্ধ। প্ৰথমাঙ্ক হইতে আমরা আর একটি সংক্ষিপ্ত উদাহরণ উদ্ধত করি । “বচ্ছ, এসে কুসুমিদ ক'অম্বতরুতণ্ডবিদব রহিণে কিঃামচোতো গিরী, জতথ্য অণুভাবসোহগগমেত্তপরিসেসধুসর সিরী মুহুৰ্ত্তং মুচ্ছন্তো তুএ পরুিদি এণ অবলম্বিন্দো তরু অলে অজ্জউত্তে আলিঙ্গিদে।”* দুইটিমাত্ৰ পদে কবি কত কথাই ব্যক্ত করিলেন ! কি করুণরসচরমস্বরূপ চিত্র সৃজিত করিলেন । চিত্র দর্শনান্তে সীতা নিদ্রা গেলেন। ইত্যবসরে দুর্মুখ আসিয়া সীতাপবাদ সম্বাদ রামকে শুনাইল । রাম সীতাকে বিসর্জন করিবার অভিপ্ৰায় করিলেন । রামচন্দ্রের চরিত্র নির্দোষ, অকলঙ্ক, দেবোপম বলিয়া ভারতে খ্যাত, কিন্তু বস্তুতঃ বাল্মীকি কখন রামচন্দ্ৰকে নিৰ্দোষ বা সর্বগুণবিভূষিত বলিয়া প্ৰতিপন্ন করিতে ইচ্ছা করেন নাই। রামায়ণগীত শ্ৰীরামচন্দ্রের চরিত্রের অনেক দোষ, কিন্তু সে সকল দোষ গুণাতিরোকমাত্র । এই জন্য তঁহার দোষগুলিনও মনোহর। কিন্তু গুণাতিরেকে যে সকল দোষ, তাহা মনোহর হইলেও দোষ বটে। পরশুরাম অতিরিক্ত পিতৃভক্ত বলিয়া মাতৃহন্তা, তাহা বলিয়া কি মাতৃবধ দোষ নহে? পাণ্ডবেরা মাতৃকথার অতিরিক্ত বশ বলিয়া এক পত্নীর পঞ্চ স্বামী, তাই বলিয়া কি অনেকের একপত্নীত্ব দোষ নয় ? রামচন্দ্ৰও অনেক নিন্দনীয় কৰ্ম্ম করিয়াছেন -যথা, বালিবধ । কিন্তু তিনি যে সকল অপরাধে অপরাধী, তন্মধ্যে এই সীতা বিসর্জনাপরাধ সর্বাপেক্ষা গুরুতর। শ্ৰীরামের চরিত্র কোন দোষে কলুষিত করিয়া কবি র্তাহাকে এই অপরাধে অপরাধী করিয়াছেন, তাহার আলোচনা করা যাউক ।

  • বৎস, এই যে পর্বত, যদুপরে কুসুমিত কদম্বে ময়ূরের পুচ্ছ ধরিতেছে—উহার নাম কি ? দেখিতেছি, তরুতলে আৰ্য্যপুত্র লিখিত—তাহার। পূৰ্ব্বসৌন্দর্ঘ্যের পরিশেষ মাত্র ধূসর শ্ৰীতে ভঁাহাকে চেনা যাইতেছে। তিনি মুহুমুৰ্হি! মূৰ্ছা যাইতেছেন-কঁাদিতে কঁাদিতে তুমি তাহাকে ধরিয়া আছ।