পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S(8 বিবিধ প্ৰবন্ধ অস্পৃশ্যা হয়। কেন ? পুরুষের সুখের পক্ষে স্ত্রীর সতীত্ব আবশ্যক। স্ত্রীজাতির সুখের পক্ষেও পুরুষের ইন্দ্ৰিয়সংযম আবশ্যক, কিন্তু পুরুষই সমাজ, স্ত্রীলোক কেহ নহে। অতএব স্ত্রীর পাতিব্ৰত্যচ্যুতি গুরুতর পাপ বলিয়া সমাজে বিহিত হইল ; পুরুষের পক্ষে নৈতিক वशन ब्रिथिंव्ग झश्ब् ि। সকল সমাজেই স্ত্রীজাতি পুরুষাপেক্ষা অনুন্নত ; পুরুষের আত্মপক্ষপাতিতাই ইহার কারণ ; পুরুষ বলিষ্ঠ, সুতরাং পুরুষই কাৰ্যকৰ্ত্তা ; স্ত্রীজাতিকে কাজে কাজেই তঁহাদিগের বাহুবলের অধীন হইয়া থাকিতে হয়। আত্মপক্ষপাতী পুরুষগণ, যত দূর আত্মসুখের প্রয়োজন, তত দূর পর্য্যন্ত স্ত্রীগণের উন্নতির পক্ষে মনোযোগী ; তাহার অতিরেকে তিলাদ্ধ নহে । এ কথা অন্যান্য সমাজের অপেক্ষা আমাদিগের দেশে বিশেষ সত্য । প্ৰাচীন কালের কথা বলিতে চাহি না ; তৎকালীন স্ত্রীজাতির চিরাধীনতার বিধি ; কেবল অবস্থাবিশেষ ব্যতীত স্ত্রীগণের ধনাধিকারে নিষেধ ; স্ত্রী ধনাধিকারিণী হইলেও স্ত্রীর দান বিক্রয়ে ক্ষমতার অভাব ; সহমরণ বিধি ; বহুকাল প্ৰচলিত বিধবার বিবাহ নিষেধ ; বিধবার পক্ষে প্রচলিত কঠিন নিয়মসকল, স্ত্রীপুরুষে গুরুতর বৈষম্যের প্রমাণ । তৎপরে মধ্যকালেও স্ত্রীজাতির অবনতি আরও গুরুতর হইয়াছিল। পুরুষ প্ৰভু, স্ত্রী দাসী ; স্ত্রী জল তুলে, রন্ধন করে, বাটনা বাটে, কুটনা কোটে । বরং বেতনভাগিনী দাসীর কিঞ্চিৎ স্বাধীনতা আছে, কিন্তু বনিতা দুহিতা স্বাসার তাহাও ছিল না। আজি কালি পুরুষের শিক্ষার গুণে হউক, স্ত্রীশিক্ষার গুণে হউক বা ইংরেজের দৃষ্টাস্তের গুণে হউক, অবস্থার পরিবর্তন হইতেছে। কিন্তু যেরূপ পরিবর্তন হইতেছে, তাহার সর্বাংশই কি উন্নতিসূচক ? বঙ্গীয় যুবকদিগের যে অবস্থান্তর ঘটিতেছে, তাহার বিশেষ আন্দোলন শুনিতে পাই ; কিন্তু বঙ্গীয় যুবতীগণের যে অবস্থান্তর ঘটিয়াছে, তাহা কি উন্নতি ? এ প্রশ্নের উত্তর দিবার পূর্বে পূৰ্ব্বকালে বঙ্গীয়া যুবতী কি ছিলেন, এক্ষণে কি হইতেছেন, তাহা স্মরণ করা আবশ্যক। প্রাচীনার সহিত নবীনার তুলনা আবশ্যক। পূর্বকালের যুবতীগণের নাম করিতে গেলে, আগে শাখা শাড়ী সিন্দুরকৌটা মনে পড়িবে ; বঁকমলের মুটাম হাত উপরে মনসাপেড়ে শাড়ীর রাঙ্গা পাড় আসিয়া পড়িয়াছে; হাতে পৈছা, কঙ্কণ, এবং শঙ্খ ( যাহার জুটিল, তাহার বাউট নামে সোনার শঙ্খ )—মুষ্টিমধ্যে দৃঢ়তর সম্মার্জনী বা রন্ধনের বেড়ী; কপালে কলা-বউয়ের মত সিন্দুরের রেখা, নাকে চন্দ্ৰমণ্ডলের মত নাথ ; দাতে অমাবস্যার মত মিশি ; এবং মস্তকের ঠিক মধ্যভাগে, পৰ্ব্বতশৃঙ্গের ন্যায় তুঙ্গ কবরীশিখর। আমরা স্বীকার করি যে, সেকেলে মেয়ে যখন গাছকোমর বঁাধিয়া, ঝাটা হাতে, খোপা খাড়া করিয়া, নথ নাড়িয়া দাড়াইত, তখন অনেক পুরুষের হৃৎকম্প হইত। যাহার এবম্বিধা প্রাঙ্গণবিহারিণী রসাবতীর সঙ্গে বাদানুবাদ সাহস