পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SV5br বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ আপনি কঁাদিতে হইবে, পরিবারবর্গকে কঁাদাইতে হইবে, নাহিলো ধৰ্ম্ম থাকে না । ধৰ্ম্মেপার্জনের জন্য কেবল পুরোহিত মহাশয়কে দাও, গুরুঠাকুরকে দাও, নিষ্কৰ্ম্ম, স্বার্থপর, লোভী, কুকৰ্ম্মাসক্ত ভিক্ষোপজীবী ব্ৰাহ্মণদিগকে দাও, আপনার প্রাণপতনে উপাজ্জিত ধন সব অপাত্রে ন্যস্ত কর। এই মূৰ্ত্তি ধৰ্ম্মের মূৰ্ত্তি নহে-একটা পৈশাচিক কল্পনা । অথচ আমরা বাল্যকাল হইতে ইহাকে ধৰ্ম্ম নামে অভিহিত হইতে শুনিয়া আসিতেছি। পাঠক যে ইহাকে পিশাচ বা রাক্ষসের ন্যায়। ভয় কন্নবেন, এবং নাম শুনিবা মাত্র পরিত্যাগ করিবেন, ইহা সঙ্গত বটে । যাহারা “শিক্ষিত” অর্থাৎ র্যাহারা ইংরেজি পড়িয়াছেন, তঁাহারা এটাকে ধৰ্ম্ম বলিয়া মানেন না, কিন্তু তঁাহারা আর এক বিপদে পড়িয়াছেন। তঁাহারা ইংরেজির সঙ্গে খি ষ্টীয় ধৰ্ম্মটাও শিখিয়াছেন । সে জন্য বাইবেল পড়িতে হয় না, বিলাতী সাহিত্য সেই ধৰ্ম্মে পরিপ্লত। আমরা খিষ্টায় ধৰ্ম্ম গ্ৰহণ করি না করি, ধৰ্ম্ম নাম হইলে সেই ধৰ্ম্মই মনে করি। কিন্তু সে আর এক ভয়ঙ্কর মূৰ্ত্তিবিশেষ। পরমেশ্বরের নাম হইলে সেই খি ষ্টানের পরমেশ্বন্দকে মনে পড়ে। সে পরমেশ্বর এই পবিত্র নামের সম্পূর্ণ অযোগ্য। তিনি বিশ্বসংসারের রাজা বটে, কিন্তু এমন প্ৰজাপীড়ক অত্যাচারী বিচারশূন্য রাজা কোন নরপিশাচেও হইতে পারে না। তিনি ক্ষণকৃত অতি ক্ষুদ্র অপরাধে মনুস্যকে অনন্তকালস্থায়ী দণ্ডের বিধান করেন। ছোট বড় সকল পাপেই অনন্ত নরক । নিম্পাপেরও অনন্ত নরক—যদি সে খিষ্টধৰ্ম্ম গ্ৰহণ না করে। যে কখন খি_ষ্ট নাম শুনে নাই, সুতরাং খি_ষ্টধৰ্ম্ম গ্ৰহণ করা যাহার সাধ্য নহে, তাহারও সেই অপরাধে অনন্ত নরক । যে হিন্দুর ঘরে জন্মিয়াছে, তার সেই হিন্দুজন্ম তাহার দোষ নহে, পরমেশ্বর স্বয়ং তাহাকে যেখানে প্রেরণ করিয়াছেন, সেইখানেই সে আসিয়াছে, যদি দোষ থাকে, তবে সে পরমেশ্বরেল দোষ, তথাপি সে দোষে সে গরিবের অনন্ত নরক । যে খি ষ্টের পূর্বে জন্মিয়াছে বলিয়াই খি_ষ্টধৰ্ম্ম গ্ৰহণ করে নাই, তাহার সে ঈশ্বরকৃত জন্মদোষে তাহারও অনন্ত নরক । এই অত্যাচারকারী বিশ্বেশ্বরের একটি কাজ এই যে, ইনি রাত্ৰিদিন প্রজাবর্গের মনের ভিতর উকি মারিয়া দেখিতেছেন, কে কি পাপসঙ্কল্প করিল। যাহার একটুকু ব্যতিক্রম দেখিলেন, তাহার অদৃষ্ট তখনই অনন্ত নরক বিধান করিলেন। যাহারা এই ধৰ্ম্মের আবৰ্ত্তমধ্যে পড়িয়াখে, তাহারা চিরদিন সেই মহাবিষাদের ভয়ে জড়সড় ও জীবন্ম ত হইয়া দিন কাটায়। পৃথিবীর কোন সুখই তাহদের কাছে আর সুখ নহে। যাহারা এই পৈশাচিক ধৰ্ম্মকে ধৰ্ম্ম বলিতে শিখিয়াছেন, ধৰ্ম্মের নামে যে তঁহাদের গায়ে জ্বর আসিবে, ইহা সঙ্গত । সাধারণ ধৰ্ম্মপ্রচারকদিগের এই সকল দোষেই ধৰ্ম্মালোচনার প্রতি সাধারণ লোকের এত অনানুরাগ জন্মিয়াছে। নহিলে ধৰ্ম্মের সহজ মূৰ্ত্তি যেরূপ মনোহারিণী, সকল ত্যাগ