পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গেীরদাস বাবাজির ভিক্ষার বুলি SS বাবাজি। সৃষ্টি স্থিতি প্ৰলয়। সৃষ্টি-বাদ দুই রকম আছে। এক মত এই যে, আদৌ জগতের উপাদান মাত্র ছিল না, ঈশ্বর আদৌ উপাদান সৃষ্ট করিয়া, পরে তাহাকে রূপাদি দিয়াছেন। আর এক মত এই যে, জগতের উপাদান নিত্য, ঈশ্বর কল্পে কল্পে তাহা রূপাদিবিশিষ্ট করেন। এই দ্বিতীয়বিধ সৃষ্টির শক্তি জগতের কেন্দ্ৰে। শুনিয়াছি, সাহেবদেরও নাকি এমনই একটা মত আছে।* সৃষ্টির মূলীভূত এই জগৎকেন্দ্র হিন্দুশাস্ত্ৰে নারায়ণের নাভিপদ্ম বলিয়া খ্যাত হইয়াছে। বিষ্ণুর হাতে যে পদ্ম, তাহা সৃষ্টিক্রিয়ার প্ৰতিমা । বাবু। আর তিনটা ? বাবাজি । গদা লয়ক্রিয়ার প্রতিমা । শঙ্খ ও চক্ৰ স্থিতিক্রিয়ার প্রতিমা । জগতের স্থিতি, স্থানে ও কালে । স্থান, আকাশ । আকাশ শব্দবহ, শব্দময় । তাই শব্দময় শঙ্খ আকাশের প্রতিমাস্বরূপ বিষ্ণুহস্তে স্থাপিত হইয়াছে। বাবু। আর চক্ৰ ? বাবাজি । উহা কালের চক্র । কল্পে কল্পে, যুগে যুগে, মন্বন্তরে মন্বন্তরে কাল বিবৰ্ত্তনশীল। তাই কাল ঈশ্বর-হস্তে চক্রাকারে আছে। আকাশ, কাল, শক্তি ও সৃষ্টি, জগদীশ্বর চারি ভুজে। এই চারিটি ধারণ করিতেছেন। এখন বুঝিলে, বিষ্ণুর শরীর নাই । বিষ্ণু বৈকুণ্ঠেশ্বর, ইহার তাৎপৰ্য্য এই যে, কুণ্ঠশূিন্য ভয়মুক্ত বৈরাগী, ঈশ্বরকে স্রষ্টা, পাতা, হৰ্ত্তা বলিয়া অনুক্ষণ হৃদয়ে ধ্যান করে । বাবু। তাই বলিলেই ত ফুরাইত। সবাই ত তা স্বীকার করে, আবার এ রূপকল্পনা কেন ? বাবাজি । সবাই স্বীকার করিবে, কলিকাতা ইংরেজের ; তবে আবার একটা মাস্তুল খাড়া করিয়া তাতে ইংরেজের নিশান উড়াইবার দরকার কি ? পৃথিবীর সবই এইরূপ কল্পনাতে চলিতেছে ; তবে আমার মত মুখের ভক্তির পথে কঁাটা দিবার এত চেষ্টা কেন ? বাবু। আচ্ছা, যথার্থই যদি বিষ্ণু অশরীরী, তবে নীল বর্ণ কার ? অশরীরীর আবার বর্ণ কি ? বাবাজি । আকাশের তা নীল বর্ণ দেখি-আকাশ কি শরীরী ? ভাল, তোমাদের ইংরেজি শাস্ত্ৰে কি বলে ? জগৎ অন্ধকার, না আলো ? বাবু। জগৎ অন্ধকার। বাবাজি । তাই বিশ্বরূপ বিষ্ণু নীলবর্ণ। বাবু। কিন্তু জগতে মাঝে মাঝে সূৰ্য্যও আছে—আলোও আছে। La Placian hypothesis.