পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গদর্শনের পত্র-সূচনা Rons অন্যাংশেরও শ্ৰীবৃদ্ধি হয় বটে। কিন্তু যদি ঐ দুই অংশের ভাষার এরূপ ভেদ থাকে যে, বিদ্বানের ভাষা মুখে বুঝিতে পারে না, তবে সংসর্গের ফল ফলিবে কি প্রকারে ? প্রধান কথা এই যে, এক্ষণে আমাদিগের ভিতরে উচ্চ শ্রেণী এবং নিম্ন শ্রেণীর লোকের মধ্যে পরস্পর সহৃদয়ত কিছুমাত্ৰ নাই । উচ্চ শ্রেণীর কৃতবিদ্য লোকেরা, মুখ দরিদ্র লোকদিগের কোন দুঃখে দুঃখী নহেন। মুখ দরিদ্রেরী, ধনবান এবং কৃতবিদ্যুদিগের কোন সুখে সুখী নহে । এই সহৃদয়তার অভাবই দেশোন্নিতির পক্ষে সম্প্রতি প্ৰধান প্ৰতিবন্ধক । ইহার অভাবে, উভয় শ্রেণীর মধ্যে দিন দিন অধিক পার্থক্য জন্মিতেছে। উচ্চ শ্রেণীর সহিত যদি পার্থক্য জন্মিল, তবে সংসর্গ-ফ’ল জন্মিবে কি প্রকারে ? যে পৃথক, তাহার সহিত সংসৰ্গ কোথায় ? যদি শক্তিমন্ত ব্যক্তিরা অশক্তদিগেৰ দুঃখে দুঃখী, সুখে সুখী না হইল, তবে কে আর তাহাদিগকে উদ্ধার করিবে ? আর যদি আপামর সাধারণ উদ্ধত না হইল, তবে র্যাহারা শক্তিমন্ত, তাহাদিগেরই উন্নতি কোথায় ? এরাপ কখন কোন দেশে হয় নাই যে, উত্তর লোক চিরকাল এক অবস্থায় রহিল, ভদ্র লোকদিগের অবিরত শ্ৰীবৃদ্ধি হইতে লাগিল । বরং মে যে সমাজের বিশেষ উন্নতি হইয়াছে, সেই সেই সমাজে উভয় সম্প্রদায় সমকক্ষ, বিমিশ্রিত এবং সহৃদয়তা-সম্পন্ন । যত দিন এই ৬াব ঘটে নাই—যত দিন উভয়ে পার্থক্য ছিল, তত দিন উন্নতি সটে নাই । যখন উভয় সম্প্রদায়ের সামঞ্জস্য হইল, সেই দিন হইতে শ্ৰীবৃদ্ধি আরম্ভ । রোম, এথেন্স, ইংলণ্ড এবং আমেরিকা ইহার উদাহরণস্থল । সে সকল কাহিনী সকলেই অবগত আছেন । পক্ষান্তরে সমাজমধ্যে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে পার্থক্য থাকিলে সমাজের যেরূপ অনিষ্ট হয়, তাহার উদাহরণ স্পার্টা, ফ্রান্স, মিশর এবং ভারতবর্ষ। এথেন্স এবং স্পার্ট দুই প্ৰতিযোগিনী নগরী। এথেন্সে সকলে সমান ; স্পার্টায় এক জাতি প্ৰভু, এক জাতি দাস ছিল । এথেন্স হইতে পৃথিবীর সভ্যতার সৃষ্টি হইল-যে বিদ্যাপ্রভাবে আধুনিক ইউরোপের এত গৌরব, এথেন্স তাহার প্রসূতি । স্পার্টা কুলক্ষয়ে লোপ পাইল । ফ্রান্সে পার্থক্য হেতু ১৭৮৯ খ্ৰীষ্টাব্দ হইতে যে মহাবিপ্লব আরম্ভ হয়, অগ্ন্যাপি তাহাব শেষ হয় নাই । যদিও তাহার চরম ফল মঙ্গল বটে, কিন্তু অসাধারণ সমাজপীড়ার পর সে মঙ্গল সিদ্ধ হইতেছে । হস্তপদাদিচ্ছেদ করিয়া, যেরূপ রোগীর আরোগ্যসাধন, এ বিপ্লবে সেইরূপ সামাজিক মঙ্গলসাধন। সে ভয়ানক ব্যাপার। সকলেই অবগত আছেন । মিশর দেশে সাধারণের সহিত ধৰ্ম্ম-যাজকদিগের পার্থক্যহেতুক, অকালে সমাজোন্নতি লোপ। প্রাচীন ভারতবর্ষে বর্ণগত পার্থক্য। এই বর্ণগত পার্থক্যের কারণ, উচ্চ ধর্ণ এবং নীচ বর্ণে যেরূপ গুরুতর ভেদ জন্মিয়াছিল, এরূপ কোন দেশে জন্মে নাই, এবং এত অনিষ্টও কোন দেশে হয় নাই। সে সকল অমঙ্গলের সবিস্তার বর্ণনা এখানে করার আবশ্যকতা নাই। এক্ষণে 8.ፃ