পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গদেশের কৃষক S SA তোমাকে সংবাদ দিল, তুমি রাত্রিমধ্যে তঁাহাব পদপ্রান্তে বসিয়া তাহার শুশ্রুষা করিতে লাগিলে । সে রোগ পূর্বে আরাম হইত না, এখন নবীন চিকিৎসাশাস্ত্রের গুণে ডাক্তারে তাহা তারাম করিল। যে ভূমিখণ্ড, নক্ষত্রময় আকাশের ন্যায় অট্টালিকাময় হইয়া এখন হাসিতেছে, আগে উহা বাস্ত্ৰ ভল্লকের আবাস ছিল। ঐ যে দেখিতেছি প্লাজপথ, পঞ্চাশ বৎসর পূৰ্ব্বে ঐ স্থানে সন্ধ্যার পর, হয় কাদার পিছলে পা ভাঙ্গিয়া পড়িয়া থাকিতে, না হয় দসু্যহস্তে প্ৰাণত্যাগ করিতে ; এখন সেখানে গাসের প্রভাবে কোটি চন্দ্ৰ অস্বলিতেছে । তোমার রক্ষার জন্য পাহারা দাড়াইয়াছে, তোমাকে বহনের জন্য গাড়ি দাড়াইয়া আছে । যেখানে বসিয়া আছ, তাহা দেখ । যেখানে অ্যাগে ষ্টেড়িা কঁথা, ছেঁড়া সাপ ছিল, এখন সেখানে কার্পেট, কোচ, ঝাড়, কাণ্ডেলাব্রা, মাধবেল, আলাবাষ্টাব- কত বলিব ? যে বাবু দূরবীণ কম্বিয়া বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্ৰহগণের গ্ৰহণ পর্যবেক্ষণ করিতেছেন, পঞ্চাশ বৎসর পূৰ্ব্বে সেন্মিলে উনি এত দিন চােল কল। ধূপ দীপ দিয়া বৃহস্পতির পূজা করিতেন । আর আমি যে হতভাগা, চেয়ারে বসিয়া ফুলিস্কেপ কাগজে বঙ্গদর্শনের জন্য সমাজতত্ত্ব লিখিতে বসিলাম, এক শত বৎসর পূৰ্ব্বে হইলে, আমি এত ক্ষণ ধরাসনে পশুবিশেষের মত বসিয়া ছেঁড়া তুলটু নাকের কাছে ধরিয়া নবমীতে লাউ খাইতে আছে কি না, সেই কচকচিতে মাতা ধরাইতাম । তবে কি দেশের বড় মঙ্গল হইতেছে না ? দেশের বড় মঙ্গল---তোমরা একবার মঙ্গলের জন্য জয়ধ্বনি কর । এই মঙ্গল ছড়াছড়ির মধ্যে আমার একটি কথা জিজ্ঞাসার আছে, কাহার এত মঙ্গল ? হাসিম শেখ আর রামা কৈবৰ্ত্ত দুই প্ৰহরের রৌদ্রে, খালি মাতায়, খালি পায়ে, এক ঠাঢ় কাদার উপর দিয়া দুইটা অস্থিচৰ্ম্মাবিশিষ্ট বলদে, ভেঁাতা। হাল ধার করিয়া আনি যা চষিতেছে, উহাদের কি মঙ্গল হইয়াছে ? উহাদের এই ভাল্দ্রের রৌদ্রে মাতা ফাটিয়া যাইতেছে, তৃসায় ছাতি ফাটি যা যাইতেছে, তাহার নিবারণ জন্য অঞ্জলি করিয়া মাঠের কর্দম পান করিতেছে ; ক্ষুধায় প্ৰাণ যাইতেছে, কিন্তু এখন বাড়ী গিয়া আহার করা হইবে না, এই চাষের সময় । সন্ধ্যান্ধেলা গিয়া উঠারা ভাঙ্গা পাতিরে রাঙ্গ রাঙ্গা বড় বড় ভাত, লুন, লঙ্কা দিয়া আধাপেট খাইবে । তাহার পর ছেড়া মাদুরে, না হয়। ভূমে, গোেহালের এক পাশে শয়ন করিবে—উহাদের মশা লাগে না। তাহারা পরদিন প্রাতে আবার সেই এক হাঁটু কাদায় কাজ করিতে যাইবে-—যাইবার সময়, হয়। জমীদার, ‘নয় মহাজন, পথ হইতে ধরিয়া লইয়া গিয়া দেনার জন্য বসাইয়া রাখিবে, কাজ হইবে না । নয়। ত চাষিবার সময় জমাদার জমৗখানি কাড়িয়া লইবেন, তাহা হইলে সে বৎসর কি করিবে ? উপবাস-সপরিবারে উপবাস । বলা দেখি চশমানাকে বাবু! ইহাদের কি মঙ্গল হইয়াছে ? তুমি লেখাপড়া শিখিয়া ইহাদিগের কি