পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२७० বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ লাগিল। দধি দুগ্ধ ঘূত নবনীতের ত কথা নাই। প্ৰজাদিগের ভক্তি অচলা, কিন্তু বাবুর উদর তেমন নহে। বাবুর কথা দূরে থাকুক, পাইক পিয়াদার পর্য্যন্ত উদরাময়ের লক্ষণ দেখা যাইতে লাগিল । কিন্তু সে সকল ত বাজে কথা । আসল কথা, জমীদারকে “আগমনী,” “নজর” বা “সেলামি” দিতে হইবে । আবার টাকার অঙ্কে yo, বসিল । কিন্তু সকলে এত পারে না । যে পারিল, সে দিল । যে পারিল না, সে কাছারিতে কয়েদ হইল, অথবা তাহার দেনা বাকির সামিল হইল । পরাণ মণ্ডল দিতে পারিল না । কিন্তু তাহার ক্ষেত্রে উত্তম ফসল হইয়াছে । তাহাতে গোমস্তার চোখ পড়িল । তিনি আট আনার ষ্টাম্প খরচ করিয়া, উপযুক্ত আদালতে “ক্রোক সহায়তার” প্রার্থনায় দরখাস্ত করিলেন । দরখাস্তের তাৎপৰ্য্য এই, “পরাণ মণ্ডলের নিকট খাজানা বাকি, আমরা তাহার ধান্য ক্ৰোক করিব । কিন্তু পরাণ বড় দাঙ্গাবাজ লোক, ক্রোক করিলে দাঙ্গা হাঙ্গামা খুন জখম করিবে বলিয়া লোক জমায়েত করিয়াছে। অতএব আদালত হইতে পিয়াদা মোকররা হউক ।” গোমস্ত নিরীহ ভাল মানুষ, কেবল পরাণ মণ্ডলেরই যত অত্যাচার। সুতরাং আদালত হইতে পিয়াদা নিযুক্ত হইল। পিয়াদা ক্ষেত্রে উপস্থিত হইয়াই মায়াময় রৌপ্যচক্রের মায়ায় অভিভূত হইল। দাড়াইয়া থাকিয়া পরাণের ধানগুলিন কাটাইয়া জমীদারের কাছারিতে পাঠাইয়া দিল । ইহার নাম “ক্রোক সহায়তা ।” পরাণ দেখিল, সৰ্ব্বস্ব গেল ! মহাজনের ঋণও পরিশোধ করিতে পারিব না, জমীদারের খাজানাও দিতে পারিব না, পেটেও খাইতে পাইব না । এত দিন পরাণ সহিয়াছিল-কুমীরের সঙ্গে বাদ করিয়া জলে বাস করা চলে না। পরাণ মণ্ডল শুনিল যে, ইহার জন্য নালিশ চলে । পরাণ নালিশ করি যা দেখিবে । কিন্তু সে ত সোজা কথা নহে । আদালত এবং বারাঙ্গনার মন্দির তুল্য ; অর্থ নাহিলে প্রবেশের উপায় নাই। ষ্টাম্পের মূল্য চাই ; উকীলের ফিস্ চাই ; আসামী সাক্ষীর তলবান চাই ; সাক্ষীর খোরাকি চাই ; সাক্ষীদের পারিতোষিক আছে ; হয় তা আমীন-খরচা লাগিবে ; এবং আদালতের পিয়াদা ও আমলাবৰ্গ কিছু কিছুর প্রত্যাশা রাখেন। পরাণ নিঃস্ব ।--তথাপি হাল বলদ ঘটি বাটি বেচিয়া আদালতে নালিশ করিল। ইহা অপেক্ষা তাহার গলায় দড়ি দিয়া মরা लाव्ल छिल । অমনি জমীদারের পক্ষ হইতে পালটা নালিশ হইল যে, পরাণ মণ্ডল ক্রোক আব্দুল করিয়া সকল ধান কাটিয়া লইয়া বিক্রয় করিয়াছে। সাক্ষীরা সকল জমীদারের প্রজাসুতরাং জমীদারের বশীভূত-স্নেহে নহে—ভয়ে বশীভুত। সুতরাং তঁাহার পক্ষেই সাক্ষ্য