পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৩১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VSO বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ এ ইতিহাস নহে-এ সত্যও নহে-এ পিতামহীর উপন্যাস মাত্র । তবে এ ঐতিহাসিক প্ৰবন্ধে এই অমূলক গালগল্পকে স্থান দিলাম কেন ? এই কথাগুলি রাজার ইতিহাস নহে, লোকের ইতিহাস বটে। ইহাতে দেখা যায়, সে রাজপুরুষদিগের সম্বন্ধে এত দূর নির্বদ্ধিতার পরিচায়ক গল্প বাঙ্গালীর মধ্যে প্রচার লাভ করিয়াছে। ভবচন্দ্ৰ রাজা ও গবচন্দ্ৰ পাত্রের দ্বারাও বাঙ্গালায় রাজ্য চলিতে পারে, ইহা বাঙ্গালীর বিশ্বাস । যে দেশে এই সকল প্ৰবাদ চলিত, সে দেশের লোকের বিবেচনা এই যে, রাজা রাজড়া সচরাচর ঘোরতর গণ্ডমূর্থ হইয়া থাকে, হইলেও বিশেষ ক্ষতি নাই। বাস্তবিক এই কথাই সত্য । বাঙ্গালায় চিরকাল সমাজই সমাজকে শাসিত ও রক্ষিত করিয়া আসিয়াছে । রাজারা হয়। সেই বাঙ্গাল কবিকুলরত্ন শ্ৰীহৰ্ষদেবের চিত্ৰত বৎসরাজের ন্যায়। মমের পুতুল, নয় এই ভবচন্দ্ৰ হবচন্দ্রের ন্যায় বারোইয়ারির সং । আজকালের রাজপুরুষদের কথা বলিতেছি না ; তঁাহারা অতিশয় দক্ষ । কথাটা এই যে, আমাদের এ নিরীহ জাতির শাসনকৰ্ত্তা বটবৃক্ষকে করিলেও হয়। ভবচন্দ্রের পর কামরূপ রঙ্গপুর রাজ্যে আর এক জন মাত্ৰ পালবংশীয় রাজা রাজ্য করিয়াছিলেন। র্তাহার পর মেছ গারো কোছ লেপচা প্ৰভৃতি অনাৰ্য্য জাতিগণ রাজ্যমধ্যে ঘোরতর উপদ্রব করে। কিন্তু তার পর আবার আর্যজাতীয় নূতন রাজবংশ দেখা যায়। র্তাহারা কি প্রকারে রাজা হইলেন, তাহার কিছু কিম্বদন্তী নাই। এই বংশের প্রথম রাজা নীলধ্বজ। নীলধ্বজ কমতাপুর নামে নগরী নিৰ্ম্মাণ করেন, তাহার ভগ্নাবশেষ আজিও কুচবেহার রাজ্যে আছে। ইহার পরিধি ৯|| o ক্ৰোশ, অতএব নগরী অতি বৃহৎ ছিল সন্দেহ নাই । ইহার মধ্যে সাত ক্রোশ বেড়িয়া নগরীর প্রাচীর ছিল, আর ১॥o ক্রোশ একটি নদীর দ্বারা রক্ষিত। প্ৰাচীরের ভিতর প্রাচীর ; গড়ের ভিতর গড়—মধ্যে রাজপুরী । সে কালের নগরীসকলের সচরাচর এইরূপ গঠন ছিল। শত্রুশঙ্কাহীন আধুনিক বাঙ্গালী খোলা সহরে বাস করে, বাঙ্গালার সে কালের সহরসকলের গঠন কিছুই অনুভব করিতে পারে না । এই বংশের তৃতীয় রাজা নীলাম্বরের সময়ে রাজ্য পুনর্বার সুবিস্তৃত হইয়াছিল দেখা যায়। কামরূপ, ঘোড়াঘাট পৰ্যন্ত রঙ্গপুর, আর মৎস্যের কিয়দংশ তাহার ছত্ৰাধীন ছিল। এই সময়ে বাঙ্গালার স্বাধীন পাঠান রাজারা দিল্লীর বাদশাহের সঙ্গে সর্বদা যুদ্ধে প্ৰবৃত্ত, অতএব অবসর পাইয়া নীলাম্বর তঁাহাদের কিছু কাড়িয়া লইয়াছিলেন বোধ হয় । কমতাপুর হইতে ঘোড়াঘাট পৰ্য্যন্ত তিনি এক বৃহৎ রাজবন্ত্ৰ নিৰ্ম্মিত করেন, অদ্যাপি সে বত্ম সেই প্রদেশের প্রধান রাজবন্ত্ৰ । তিনি বহুতর দুর্গ নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন। বোধ হয়, তিনি নিষ্ঠুরস্বভাব ছিলেন, তাহাতেই তাহার রাজ্য ধ্বংস হইল। শচীপুত্র নামে তাহার এক ব্ৰাহ্মণ মন্ত্রী ছিল। শচীপুত্রের পুত্র কোন গুরুতর অপরাধ করিয়াছিল। নীলাম্বর