পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৩১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঙ্গালার ইতিহাসের ভগ্নাংশ WSS তাহাকে বধ করিলেন। কিন্তু কেবল বধ করিয়াই সন্তুষ্ট নহেন, তাহার মাংস রাধাইয়া শচীপুত্রকে কৌশলে ভোজন করাইলেন। শচীপুত্ৰ জানিতে পারিয়া দেশত্যাগ করিয়া গৌড়ের পাঠান রাজার দরবারে উপস্থিত হইল। শচীপুত্রের দেখান প্রলোভনে লুব্ধ হইয়া, পাঠানরাজ ( আমি কখনই গৌড়ের পাঠানরাজাদিগকে বাঙ্গালার রাজা বলিব না । ) নীলাম্বরকে আক্রমণ করিবার জন্য সৈন্য প্রেরণ করলেন । নীলাম্বর আর যাই হউন-বাঙ্গালার সেন কুলাঙ্গারের মত ছিলেন না। খড়কীদ্বারা দিয়া পলায়ন না করিয়া সম্মুখীন হইয়া যুদ্ধ করিলেন। যুদ্ধে মুসলমানকে পরাজিত করিলেন। তখন সেই ক্ষৌরিতমুণ্ড প্ৰতারক, যে পথে ট্রয় হইতে আজিকালিকার অনেক রাজ্য পৰ্য্যন্ত নীত হইয়াছে, চোরের মত সেই অন্ধকারপথে গেল। হার মানিল ; সন্ধি চাহিল । সন্ধি হইল । ক্ষৌরিতমুণ্ড বলিল, “মুসলমানের বিবির মহারাণীজিকে সেলাম করিতে যাইবে।” মহারাজা তখনই সম্মত হইলেন। কিন্তু যে সকল দোলা বিবিদের লইয়া আসিল, তাহার রাজপুরমধ্যে পৌছিল। তাহার ভিতর হইতে একটিও পাঠানকন্যা বা কোন জাতীয় কন্যা বাহির হইল না-যাহারা বাহির হইল, তাহারা শ্মশ্রুগুম্মফশোভিত সশস্ত্র যুবা পাঠান। তাহারা তৎক্ষণাৎ রাজপুরী আক্রমণ করিয়া, নীলাম্বরকে এক পিঞ্জরের ভিতর পুরিয়া গৌড়ে পাঠাইল । নীলাম্বর পথে পিঞ্জর হইতে পলায়ন করিয়াছিলেন । কিন্তু বোধ হয়, অধিক দিন জীবিত ছিলেন না ; কেন না, কেহ তঁহাকে আর দেখে নাই । এ দেশে রাজা গেলেই রাজ্য যায়। নীলাম্বর গেলেন ত তেঁাহার রাজ্য পাঠানের অধীন হইল। ইহার পূর্বে মুসলমান কখন এ দেশে আইসে নাই । কিন্তু যখন নীলাম্বরের পর আৰ্য্যবংশীয় রাজার কথা শুনা যায় না, তখন ইহাই সিদ্ধান্ত করিতে হইবে যে, রঙ্গপুররাজ্য এই সময় পাঠানের কারকবলিত হইল । এই সময়ে-কিন্তু কোন সময়ে, সেই আসল কথা ! সন তারিখশুন্য যে ইতিহাস-সে পথশূন্য অরণ্য।তুল্য-প্রবেশের উপায় নাই-এমত, বিবেচনা করিবার অনেক কারণ আছে যে, বিখ্যাত পাঠানরাজ হোসেন শাহাই রঙ্গপুরের জয়কৰ্ত্তা। হোসেন শাহা ইং ১৪৯৭ সন হইতে ১৫২১ সন পৰ্য্যন্ত রাজ্য করেন । মুসলমানেরা রঙ্গপুরের কিয়দংশ মাত্র অধিকৃত করিয়াছিলেন। কামরূপ কোচেরা অধিকৃত করিয়াছিল। তাহারা রঙ্গপুরের অবশিষ্ট অংশ অধিকৃত করিয়া কোচবিহার রাজ্য স্থাপন করিল।