পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৩৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Šb(፩ b” বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ যে সকল শব্দ সংস্কৃতের সহিত সম্বন্ধশুন্য, তৎসম্বন্ধে শ্যামাচরণবাবু যাহা বলিয়াছেন, তাহা অত্যন্ত সারগর্ভ এবং আমরা তাহার সম্পূর্ণ অনুমোদন করি। সংস্কৃতিপ্রিয় লেখকদিগের অভ্যাস যে, এই শ্রেণীর শব্দ সকল তঁাহারা রচনা হইতে একেবারে বাহির করিয়া দেন । অন্যের রচনায় সে সকল শব্দের ব্যবহার শেলের ন্যায় তাহাদিগকে বিদ্ধ করে । ইহার পর মুখতা আমরা আর দেখি না। যদি কোন ধনবান ইংরেজের অর্থভাণ্ডারে হালি এবং বাদশাহী দুই প্রকার মোহর থাকে, এবং সেই ইংরেজ যদি জাত্যভিমানের বিশ হইয়া বিবির মাথাওয়ালা মোহর রাখিয়া, ফাসি লেখা মোহরগুলি ফেলিয়া দেয়, তবে সকলেই সেই ইংরেজকে ঘোরতর মুখ বলিবে । কিন্তু ভাবিয়া দেখিলে, এই পণ্ডিতেরা সেই মত মুখ । তাহার পরে অপ্রচলিত সংস্কৃত শব্দকে বাঙ্গালা ভাষায় নূতন সন্নিবেশিত করার ঔচিত্য বিচাৰ্য্য। দেখা যায়, লেখকের ভূরি ভূরি অপ্রচলিত নূতন সংস্কৃত শব্দ প্রয়োজনে বা নিম্প্রয়োজনে ব্যবহার করিয়া থাকেন । বাঙ্গাল। আজিও অসম্পূর্ণ ভাষা, তাহার অভাব পূরণ জন্য অন্য অন্য ভাষা হইতে সময়ে সময়ে শব্দ কর্জ করিতে হইবে। কার্জ করিতে হইলে, চিরকেলে মহাজন সংস্কৃতের কাছেই ধার করা কীৰ্ত্তব্য। প্ৰথমতঃ, সংস্কৃত মহাজনই পরম ধনী ; ইহার রত্নময় শব্দভাণ্ডার হইতে যাহা চাও, তাহাই পাওয়া যায়। দ্বিতীয়তঃ, সংস্কৃত হইতে শব্দ লাইলে, বাঙ্গালার সঙ্গে ভাল মিশে । বাঙ্গালার অস্থি, মজ্জা, শোণিত, মাংস সংস্কৃতেই গঠিত । তৃতীয়তঃ, সংস্কৃত হইতে নূতন শব্দ লাইলে, অনেকে বুঝিতে পারে ; ইংরেজী বা আরবী হইতে লইলে কে বুঝিবে ? “মাধ্যাকর্ষণ” বলিলে কতক অর্থ অনেক অনভিজ্ঞ লোকেও বুঝে । “গ্রাবিটেশ্যন” বলিলে ইংরেজী যাহারা না বুঝে, তাহারা কেহই বুঝিবে না । অতএব যেখানে বাঙ্গালা শব্দ নাই, সেখানে অবশ্য সংস্কৃত হইতে অপ্রচলিত শবদ গ্ৰহণ করিতে হইবে । কিন্তু নিম্প্রয়োজনে অর্থাৎ বাঙ্গালা শব্দ থাকিতে তদ্বাচক অপ্রচলিত সংস্কৃত শবদ ব্যবহার র্যাহার করেন, তাহদের কিরূপ রুচি, তাহা আমরা বুঝিতে পারি না। স্থূল কথা, সাহিত্য কি জন্য ? গ্ৰন্থ কি জন্য ? যে পড়িবে, তাহার বুঝিবার জন্য। না বুঝিয়া, বহি বন্ধ করিয়া, পাঠক ত্ৰাহি ত্ৰাহি করিয়া ডাকিবে, বোধ হয় এ উদ্দেশ্যে কেহ গ্ৰন্থ লিখে না । যদি এ কথা সত্য হয়, তবে যে ভাষা সকলের বোধগম্য —অথবা যদি সকলের বোধগম্য কোন ভাষা না থাকে, তবে যে ভাষা অধিকাংশ লোকের বোধগম্য।--তাহাতেই গ্ৰন্থ প্রণীত হওয়া উচিত । যদি কোন লেখকের এমন উদ্দেশ্য থাকে যে, আমার গ্রন্থ দুই চারি জন শব্দপণ্ডিতে বুকুক, আর কাহারও বুঝিবার প্রয়োজন নাই, তবে তিনি গিয়া দুরূহ। ভাষায় গ্ৰন্থপ্রণয়নে প্ৰবৃত্ত হউন। যে তঁাহার যশ করে