মনুষ্যত্ব কি ?* মনুষ্যজন্ম গ্ৰহণ করিয়া কি করিতে হইবে, আজিও মনুষ্য তাহা বুরিতে পারে নাই। অনেক লোক আছেন, তঁাহারা জগতে ধৰ্ম্মাত্মা বলিয়া আত্মপরিচয় দেন ; তঁাহারা মুখে বলিয়া থাকেন যে, পরকালের জন্য পুণ্যসঞ্চয়ই ইহজন্মে মনুষ্যের উদ্দেশ্য । কিন্তু অধিকাংশ লোকই, বাক্যে না হউক, কাৰ্য্যে। এ কথা মানে না ; অনেক লোক পরীকালের অস্তিত্বই স্বীকার করে না। পরকাল সৰ্ব্ববাদিসম্মত, এবং পরকালের জন্য পুণ্যসঞ্চয় ইহলোকের একমাত্ৰ উদ্দেশ্য বলিয়া সৰ্ব্বজনস্বীকৃত হইলেও, পুণ্য কি, সে বিষয়ে বিশেষ মতভেদ । এই বঙ্গদেশেই এক সম্প্রদায়ের মত--মদ্যপান পরকালের ঘোর বিপদের কারণ ; আর এক সম্প্রদায়ের মত-মদ্যপান পরকালের জন্য পরম কাৰ্য্য । অথচ উভয় সম্প্রদায়ই বাঙ্গালী এবং উভয় সম্প্রদায়ই হিন্দু। যদি সত্য সত্যই পরীকালের জন্য পুণ্যসঞ্চয় মনুষ্যজন্মের প্রধান কাৰ্য্য হয়, তবে সে পুণ্যই বা কি, কি প্রকারে তাহা আজ্জিত হইতে পারে, তাহার স্থিরতা কিছুই এ পৰ্য্যন্ত হয় নাই । মনে কর, তাহ স্থির হইয়াছে ; মনে কর, ব্ৰাহ্মণে ভক্তি, গঙ্গাস্নান, তুলসীর মালা ধারণ, এবং এরিনামসঙ্কীৰ্ত্তন ইত্যাদি পুণ্যকৰ্ম্ম । ইহাই মনুষ্যজীবনের উদ্দেশ্য । অথবা মনে কর, রবিবারে কার্য্যত্যাগ, গিব জায় বসিয়া নয়ন নিমীলন, এবং খ্রিষ্টধৰ্ম্ম ভিন্ন ধৰ্ম্মান্তরে বিদ্বেষ, ইহাই পুণ্যকৰ্ম্ম । যাহা হউক, একটা কিছু, আর কিছু হউক না হউক, দান দয়া সত্যনিষ্ঠা প্রভৃতি পুণ্যকৰ্ম্ম বলিয়া সৰ্ব্বজনস্বীকৃত। কিন্তু তাই বলিয়া, ইহা দেখা যায় না যে, দান। দয়া সত্যনিষ্ঠা প্রভৃতিকে অধিক লোক জীবনের উদ্দেশ্য বলিয়া অভ্যস্ত এবং সাধিত করে । অতএব পুণ্য যে জীবনের উদ্দেশ্য, তাহা সৰ্ব্বব্যাদি স্বীকৃত নহে ; যেখানে স্বীকৃত, সেখানে সে বিশ্বাস মৌখিক মাত্ৰ । বাস্তবিক জীবনের উদ্দেশ্য কি, এ তত্ত্বের প্রকৃত মীমাংসা লইয়া মনুস্যলোকে আজিও বড় গোল আছে। লক্ষ লক্ষ বৎসর পূৰ্ব্বে, অনন্ত সমুদ্রের অতলস্পর্শ জলমধ্যে যে আণুবীক্ষণিক জীব বাস করিত, তাহার দেহতত্ত্ব লইয়া মনুস্য বিশেষ ব্যস্ত|--আপনি এ ংসারে আসিয়া কি করিবে, তাহা সম্যক প্রকারে স্থিরীকরণে তাদৃশ চেষ্টিত নহে। খে। প্রকারে হউক, আপনার উদরপূর্তি, এবং অপরাপর বাহেন্দ্ৰিয়সকল চরিত্যাথি করিয়া, আত্মীয় স্বজনেরও উদরপূৰ্ত্তি সংসাধিত করিতে পারিলেই অনেকে মনুস্যজন্ম সফল বলিয়া বোধ করেন। তাহার উপর কোন প্রকারে অন্যের উপর প্রাধান্যলাভ উদ্দেশ্য।
- বঙ্গদর্শন, ১২৮৪), আশ্বিন ।
89
