পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৩৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকশিক্ষা NOVA করিতেছেন, বিশ্ব পালন করিতেছেন, বিশ্ব ধ্বংস করিতেছেন, যে পাপ পুণ্য আছে, যে পাপের দণ্ড, পুণ্যের পুরস্কার আছে, যে জন্ম আপনার জন্য নহে, পরের জন্য, যে অহিংসা পরম ধৰ্ম্ম, যে লোকহিত পরম কাৰ্য্য—সে শিক্ষা কোথায় ? সে কথক কোথায় ? কেন গেল ? বঙ্গীয় নব্য যুবকের কুরুচির দোষে। গুলকি কাওরাণী শূয়ার চরাইতে অপারগ হইয়া কুপথ অবলম্বন করিয়াছে। তাহার গান বড় মিষ্ট লাগে, কথকের কথা শুনিয়া কি হবে ? দক্ষযজ্ঞে, বিশ্বযজ্ঞে, ঈশ্বরের জন্য ঈশ্বরীর আত্মসমৰ্পণ শুনিয়া কি হইবে ? চল ভাই, ব্ৰাণ্ডি টানিয়া, থিয়েটারে গিয়া কাওরাণীর টপ্পা শুনিয়া আসি। এই অল্প ইংরেজিতে শিক্ষিত স্বধৰ্ম্মভ্ৰষ্ট, কদাচার, দুরাশয়, অসার, অনালাপ্য, বঙ্গীয় যুবকের দোষে লোকশিক্ষার আকর কথকতা লোপ পাইল । ইংরেজী শিক্ষার গুণে লোকশিক্ষার উপায় ক্রমে লুপ্ত ব্যতীত বদ্ধিত হইতেছে না । কিন্তু আসল কথা বলি। কেন যে এ ইংরেজী শিক্ষা সত্ত্বেও দেশে লোকশিক্ষার উপায় হ্রাস ব্যতীত বৃদ্ধি পাইতেছে না, তাহার স্কুল কারণ বলি-শিক্ষিতে অশিক্ষিতে সমবেদনা নাই। শিক্ষিত, অশিক্ষিতের হৃদয় বুঝে না। শিক্ষিত, অশিক্ষিতের প্রতি দৃষ্টিপাত করে না। মরুক রামা লাঙ্গল চষে, আমার ফাউলকারি সুসিদ্ধ হইলেই হইল। রামা কিসে দিনযাপন করে, কি ভাবে, তার কি অসুখ, তার কি সুখ, তাহ নদের ফটিকচাঁদ তিলাৰ্দ্ধ মনে স্থান দেন না। বিলাতে কাণ। ফসেট সাহেব, এ দেশে সার অসৃলি ইডেন, ইহারা তঁহার বক্তৃতা পড়িয়া কি বলিবেন, নদের ফটিকচাঁদের সেই ভাবনা। রামা চুলোয় যাক, তাহাতে কিছু আসিমা যায় না। র্তাহার মনের ভিতর যাহা আছে, রামা এবং রামার গোষ্ঠী—সেই গোষ্ঠী ছয় কোটি ষাট লক্ষের মধ্যে ছয় কোটি উনষাটি লক্ষ নব্বই হাজার নয় শ–তাহারা তঁহার মনের কথা বুঝিল না। যশ লইয়া কি হইবে ? ইংরেজে ভাল বলিলে কি হইবে ? ছয় কোটি ষাট লক্ষের ক্ৰন্দনধ্বনিতে আকাশ যে ফাটিয়া যাইতেছে-বাঙ্গালায় লোক যে শিখিল না । বাঙ্গালায় লোক যে শিক্ষিত নাই, ইহা সুশিক্ষিত বুঝেন না। সুশিক্ষিত যাহা বুঝেন, অশিক্ষিতকে ডাকিয়া কিছু কিছু বুঝাইলেই লোক শিক্ষিত হয়। এই কথা বাঙ্গালার সর্বত্রে প্রচারিত হওয়া আবশ্যক। কিন্তু সুশিক্ষিত, অশিক্ষিতের সঙ্গে না মিশিলে তাহ ঘটবে না। সুশিক্ষিতে অশিক্ষিতে সমবেদন চাই ।