পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Nyrsfirs 8S নাই। এই পরদুঃখকাতর হৃদয়া, স্নেহময়ী, বনাচারিণী যে অবধি প্ৰথম দেখা দিলেন, সেই অবধিই ভঁাহার প্রতি পাঠকের গ্ৰীতি সঞ্চার হইতে থাকিল । তদ্ভিন্ন চন্দ্ৰকেতু ও লবের চিত্রও প্রশংসনীয়। প্রাচীন কবিদিগের ন্যায়। ভবভূতিও জড় পদার্থকে রূপবান করণে বিলক্ষণ সুচতুর। তমসা, মুরলা, গঙ্গা এবং পৃথিবী এই নাটকে মানবীরূপিণী। সেই রূপগুলিন যে মনোহর হইয়াছে, তাহ পূর্বেই বলিয়াছি। কবির সৃষ্টি-চরিত্র, রূপ, স্থান, অবস্থা, কাৰ্য্যাদিতে পরিণত হয়। ইহার মধ্যে কোন একটির সৃষ্টি কবির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নহে। সকলের সংযোগে সৌন্দৰ্য্যের সৃষ্টিই তঁাহার মুখ্য উদ্দেশ্য। চরিত্র, রূপ, স্থান, অবস্থা, কাৰ্য্য, এ সকলের সমবায়ে যাহা দাড়াইল, তাহা যদি সুন্দর হইল, তবেই কবি সিদ্ধ।কাম হইলেন । ভবভূতির চরিত্রসৃজনের ক্ষমতার পরিচয় দিয়াছি। অন্যান্য বিষয়ে তঁাহার সৃজনকৌশলের পরিচয় ছায়া নামে উত্তরচরিতের তৃতীয়াঙ্ক । আমাদিগের পরিশ্রম যদি নিৰ্ম্মফল না হইয়া থাকে, তবে পাঠক সেই ছায়ার মোহিনী শক্তি অনুভূত করিয়াছেন । ঈদৃশ রমণীয়া সৃষ্টি অতি দুর্লভ। সৃষ্টি কৌশল কবির প্রধান গুণ । কবির আর একটি বিশেষ গুণ রসোদ্ভাবন। রসোদ্ভাবন কাহাকে বলে, আমরা বুঝাইতে বাসনা করি, কিন্তু রস শব্দটি ব্যবহার করিয়াই আমরা সে পথে কাটা দিয়াছি । এ দেশীয় প্ৰাচীন আলিঙ্কারিকদিগের ব্যবহৃত শব্দগুলি এ কালে পরিহাৰ্য্য। ব্যবহার করিলেই বিপদ ঘটে। আমরা সাধ্যানুসারে তাহা বৰ্জন করিয়াছি, কিন্তু এই রসশব্দটি ব্যবহার করিয়া বিপদ ঘটিল। নয়টি বৈ রস নয়, কিন্তু মনুষ্যচিত্তবৃত্তি অসংখ্যা। রতি, শোক, ক্ৰোধ, স্থায়ী ভাব ; কিন্তু হৰ্ষ, অমর্ষ প্রভৃতি ব্যভিচারী ভাব । স্নেহ, প্ৰণয়, দয়া, ইহাদের কোথাও স্থান নাই ;-না স্থায়ী, না ব্যভিচারী-কিন্তু একটি কাব্যানুপযোগী কদৰ্য্য মানসিক বৃত্তি আদিরসের আকারস্বরূপ স্থায়ী ভাবে প্ৰথমে স্থান পাইয়াছে । সুেহ, প্ৰণয়, দয়াদি পরিজ্ঞাপক রস নাই ; কিন্তু শান্তি একটি রস। সুতরাং এবম্বিধ পারিভাষিক শব্দ লইয়া সমালোচনার কাৰ্য্য সম্পন্ন হয় না। আমরা যাহা বলিতে চাহি, তাহ অন্য কথায় বুঝাইতেছি।--আলঙ্কারিকদিগকে প্ৰণাম করি । মনুম্ভের কাৰ্য্যের মূল তাহাদিগের চিত্তবৃত্তি। সেই সকল চিত্তবৃত্তি অবস্থানুসারে অত্যন্ত বেগবতী হয়। সেই বেগের সমুচিত বৰ্ণনদ্বারা সৌন্দৰ্য্যের সৃজন, কাব্যের উদ্দেশ্য। আস্মদেশীয় আলঙ্কারিকেরা সেই বেগবতী মনোবৃত্তিগণকে “স্থায়ী ভাব” নাম দিয়া এ শব্দের এরােপ পরিভাষা করিয়াছেন যে, প্ৰকৃত কথা বুঝা ভার। ইংরাজি আলঙ্কারিকেরা তাহাকে (Passions) বলেন । আমরা তাহার কাব্যগত প্ৰতিকৃতিকে রসোস্তাবন বলিলাম।