পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bro বিবিধ প্ৰবন্ধ কে ? দুষ্মন্ত-মহাবৃক্ষের বৃহচ্ছায়া এখানে শকুন্তলা-কলিকাকে ঢাকিয়া ফেলিয়াছে-সে ভাল করিয়া মুখ খুলিয়া ফুটিতে পারিতেছে না। এ প্রণয়সম্ভাষণ নহে-রাজক্ৰীড়া, পৃথিবীপতি কুঞ্জবনে বসিয়া সাধ করিয়া প্রেম করারাপ খেলা খেলিতে বসিয়াছেন ; মত্ত মাতঙ্গের ন্যায় শকুন্তলা-নলিনীকোরককে শুণ্ডে তুলিয়া, বনক্রীড়ার সাধ মিটাইতেছেন, নলিনী তাতে ফুটিবে কি ? যিনি এ কথাগুলি স্মরণ না রাখিবেন, তিনি শকুন্তলা-চরিত্ৰ বুঝিতে পারিবেন। না ; যে জলনিষেকে মিরান্দা ও জুলিয়েট ফুটিল, সে জলনিষেকে শকুন্তলা ফুটিল না ; প্রণয়াসক্তা শকুন্তলায় বালিকার চাঞ্চল্য, বালিকার ভয়, বালিকার লজ্জা দেখিলাম ; কিন্তু রমণীর গাম্ভীৰ্য্য, রমণীর স্নেহ কই ? ইহার কারণ কেহ কেহ বলিবেন, লোকাচারের ভিন্নতা ; দেশভেদ। বস্তুতঃ তাহা নহে। দেশী কুলবধু বলিয়া শকুন্তলা লজ্জায় ভাঙ্গিয়া পড়িল,-আর মিরান্দা বা জুলিয়েট বেহায়া বিলাতী মেয়ে বলিয়া মনের গ্ৰন্থি খুলিয়া দিল, এমত নহে। ক্ষুদ্রাশয় সমালোচকেরাই বুঝান না যে, দেশভেদে বা কালভেদে কেবল বাহভেদ হয় মাত্র ; মনুষ্যহাদয় সকল দেশেই সকল কালেই ভিতরে মনুস্যহৃদয়ই থাকে। বরং বলিতে গেলে-তিন জনের মধ্যে শকুন্তলাকেই বেহায় বলিতে হয়“অসন্তোসে উণ কিং করেদি ?” তাহার প্রমাণ। যে শকুন্তলা, ইহার কয় মাস পরে, পৌরবের সভাতলে দাড়াইয়া দুষ্মন্তকে তিরস্কার করিয়া বলিয়াছিল-“অনাৰ্য্য! আপন হৃদয়ের অনুমানে সকলকে দেখ ?”-সে। শকুন্তলা যে, লতামণ্ডপে বালিকাই রহিল, তাহার কারণ, কুলকন্যাসুলভ লাজা নহে। তাহার কারণ-দুষ্মন্তের চরিত্রের বিস্তার। যখন শকুন্তলা সভাতলে পরিত্যক্তা, তখন শকুন্তলা পত্নী, রাজমহিষী, মাতৃপদে আরোহণোদ্যতা, সুতরাং তখন শকুন্তলা রমণী ; এখানে তপোবনে,-তপস্বিকত্স্যা, রাজপ্ৰসাদের অনুচিত অভিলাষিণী—এখানে শকুন্তলা কে ? করিশুণ্ডে পদ্মমাত্ৰ। শকুন্তলার কবি যে টেম্পেষ্টের কবি হইতে হীনপ্রভ নহেন, ইহাই দেখাইবার জন্য এ স্থলে আয়াস यौकiद्ध कड़ेि व्लांभ । দ্বিতীয়, শকুন্তলা ও দেসন্দিমোনা শকুন্তলার সঙ্গে মিরমদার তুলনা করা গেল-কিন্তু ইহাও দেখান গিয়াছে যে, শকুন্তলা ঠিক মিরান্দা নহে। কিন্তু মিরান্দার সহিত তুলনা করিলে শকুন্তলা-চরিত্রের এক ভাগ বুঝা যায়। শকুন্তলা-চরিত্রের আর এক ভাগ বুঝিতে বাকি আছে। দেসুন্দিমোনার সঙ্গে তুলনা করিয়া সে ভাগ বুঝাইব ইচ্ছা আছে।