১৬২ বিবিধ কথা ঘটিয়াছে, তাই রোহিণীর পরিণাম ভাল করিয়া বুঝাইয়া বলিবার অবকাশ মেলে নাই। তথাপি কবির সেই কল্পনার ফাক একটু পূর্ণ করিয়া লইলে, রোহিণীর ওই পরিণায়—চরিত্র ও ঘটনাবলীর ঘাত-প্রতিঘাতে ওইরূপ হওয়াই সঙ্গত বলিয়া মনে হইবে। ইহাও মনে রাখিতে হইবে যে, রোহিণী আজিকার মত সংস্কারমুক্ত নারী নয়, সে নিতান্তই নিয়তিনিয়ন্ত্রিত জীব—দেহপ্রাণের আদিম প্রবৃত্তি ও মনের অভ্যস্ত সংস্কার, এই দুইয়ের দ্বন্দ্বে তাহার জীবনের গতি নির্দিষ্ট হইয়াছে। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসও সাইকলজিক্যাল নভেল বা প্রব্লেম-নভেল নয়। তাহার জীবন-দর্শন সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, তিনি মানুষের মনের অহং-চেতনা অপেক্ষা তাহার দেহের নিয়তি ও প্রাণের রহস্যময় চেতনাকে তাহার কবিদ্যুষ্টির লক্ষ্য করিয়াছেন। অতএব বঙ্কিমচন্দ্রের কাব্যগুলির সমালোচনা ও স্ববিচার করিতে হইলে খাটি কবিকল্পনার অনুসরণ করিতে হইবে, আত্মবুদ্ধির মতবাদ, আত্মভাবের পক্ষপাত—মন হইতে দূর করিতে হইবে , জীবনকে কবি যে ভাবে ভাবনা করিয়াছেন, সেই ভাই অনুগামী হইয়াই কাব্যের দোষগুণ বিচার করিতে হইবে। বঙ্কিমচন্দ্রের . জগৎ অপর কোনও কবির ধারণার সহিত মেলে না বলিয়াই সে জগৎ মিথ্যা নহে—রসস্বষ্টিতে সত্যমিথ্যার নিরিখ কোনও একটি বিশেষ তত্ত্ব 線 বা যুক্তিমার্গের অধীন নয়—কারণ, সে স্বষ্টিতে জীবনের কোন তত্ত্ব নয়—সুগভীর রহস্যই প্রতিফলিত হয়। অতএব, সাহিত্য-সমালোচকের পক্ষে কোনও মতবাদ বা ব্যক্তিগত ভাবতন্ত্রের শাসন সৰ্ব্বদা পরিহার করা উচিত । আজ আমি 'ক্লষ্ণকান্তের উইলে’র রোহিণীচরিত্র-ঘটিত বাদবিতর্কের প্রসঙ্গে উপরে যাহা লিখিলাম—শরৎচন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় এত কথা