পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামমোহন রায় ፃዊ রামমোহন ঐতিহাসিক ব্যক্তি মাত্র, ইতিহাস-স্রষ্টা নহেন ; তিনি যুগপ্রতিনিধি, যুগাবতার নহেন। যুগসন্ধি-সময়ের একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি র্তাহার মস্তিষ্কে স্কৃৰ্ত্তিলাভ করিয়াছিল। মস্তিষ্ক বলিবার কারণ আছে ; রামমোহনের জীবনে বা চরিত্রে নবযুগের আদর্শ প্রকাশ পায় নাই ; ব্যক্তিগতভাবে তিনি একজন পূরা সেকালের বাঙালী । এই জন্য র্তাহার মতবাদের সঙ্গে তাহার জীবনকে মিলাইয়া দেখিলে আমরা একটি স্বতন্ত্র পুরুষের পরিচয় পাই। এইরূপ চরিত্র-নীতি মনোবিজ্ঞানের বহিভূত নয়—মনীষা ও পাণ্ডিত্যের শক্তি এইরূপই হইয়া থাকে। আমি যদি অবৈধভাবে স্ত্রী গ্রহণ করি, অথবা মদ্যপান করি—তথাপি নিন্দুকের নিন্দ ক্ষান্ত করিবার জন্য শাস্ত্রবিধি ও যুক্তি প্রদর্শনের ক্ষমতা আমার আছে ; নিজের নিকট কৈফিয়তের প্রয়োজন নাই ; বিরুদ্ধবাদীকে নিরস্ত করিতে পারিলেই হইল। আমি যদি অসদুপায়ে অর্থ উপার্জন করিয়া ধনী হই, এমন কি নিজের পিতাকেও প্রবঞ্চনা করিয়া আত্মরক্ষা করিয়া থাকি, তাহাতে লজ্জিত বা অনুতপ্ত হইবার মত দুৰ্ব্বলতা আমার নাই—আইনের সাহায্যে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করিতে না পারিলেই হইল । লোক-নিন্দ অগ্রাহ করিয়াও প্রতিষ্ঠা লাভ করিবার শক্তি ও বুদ্ধি আমার আছে। আত্মরক্ষা, আত্মপ্রচার ও আত্মপ্রতিষ্ঠার যত উপায় আছে, রামমোহন তাহার কোনটিতেই কম পারদর্শী ছিলেন না। শ্ৰীযুক্ত গিরিজাশঙ্কর রায় চৌধুরী তাহার নব প্রকাশিত ‘জীবন চরিতের খসড়া’র একস্থানে মন্তব্য করিয়াছেন— “যেকালে রামমোহন বেদান্ত আলোচনা করিতেছেন, সেই কালেই তিনি একশত লাঠিয়াল লইয়া মফঃস্বলে আমবাগান ও ধানের জমী লুঠ করিতে চলিয়াছেন।” এক কথায় রামমোহন-চরিত্র আধুনিক আদর্শ-সন্মত নয়।