মধুসূদনের সাহিত্য-জীবন নানা কারণে নানা ভাবে খণ্ডিত ও বাধাগ্রস্ত হইয়াছিল। চিঠিপত্রে প্রকাশিত তাঁহার বহুবিধ সঙ্কল্প, পরিণামে সেগুলির বিফলতা এবং তাঁহার বিবিধ অসম্পূর্ণ কাব্য ও কবিতায় তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি নানা সময়ে বিশেষ উৎসাহের সঙ্গে অনেকগুলি কাব্য ও কবিতা রচনা আরম্ভ করিয়াছিলেন কিন্তু শেষ করিতে পারেন নাই। এই অসম্পূর্ণ কাব্যগুলির মধ্যে তাহার ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ ও নীতিগর্ভ কবিতাবলীই আমাদের বিশেষ আক্ষেপের কারণ হইয়া আছে। বর্ত্তমান সংস্করণ গ্রন্থাবলীর এই বিবিধ খণ্ডটি কবি মধুসূদনের বিরাট্ সম্ভাবনার ও বিপুল নৈরাশ্যের নিদর্শন।
এই বিক্ষিপ্ত কবিতা ও কাব্যাংশগুলি আমরা নানা স্থান হইতে সংগ্রহ করিয়াছি। কবির জীবিতকালে বিভিন্ন সাময়িক-পত্রে ইহাদের কয়েকটি মাত্র প্রকাশিত হইয়াছিল; বাকিগুলি তাঁহার মৃত্যুর পরেই প্রকাশিত হইয়াছে। সাময়িক-পত্রে সবগুলি বাহির হয় নাই। ‘জীবন-চরিতে’ ও ‘মধুস্মৃতি’তে অধিকাংশই স্থান পাইয়াছে। একই কবিতার কোন কোন স্থানে দুইরূপ পাঠ পাওয়া গিয়াছে। কয়েকটি অসম্পূর্ণ কবিতা মধুসূদনের ‘চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী’র ১ম সংস্করণের (১৮৬৬) পরিশিষ্টে “অসমাপ্ত কাব্যাবলি” নামে বাহির হইয়াছিল। দীননাথ সান্যাল-সম্পাদিত ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’র শেষে একটি অপ্রকাশিত-পূর্ব্ব কবিতা আছে; নগেন্দ্রনাথ সোম সেটি সংগ্রহ করিয়া দিয়াছিলেন। আমরা এই খণ্ডে এই সকলগুলিই একত্র সন্নিবিষ্ট করিলাম। কবিতাগুলিকে যত দূর সম্ভব, কালানুক্রমিক সাজাইবার চেষ্টা করিয়াছি। যে যে স্থান হইতে কবিতাগুলি সংগৃহীত হইয়াছে, নিম্নে তাহার নির্দেশ দিলাম। “যো” বলিতে যোগীন্দ্রনাথ বসু-প্রণীত ‘জীবন-চরিত’ চতুর্থ সংস্করণ এবং “ন” বলিতে নগেন্দ্রনাথ সোম-প্রণীত ‘মধু-স্মৃতি’ বুঝিতে হইবে।