পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় ভাগ .I $ &ጫ গিয়াছে। তাঁহা হইলে দ্বাদশবার করিয়া আরম্ভ কর। এবং তাহাও অনায়াস সাধ্য হইলে অল্পে অল্পে মন্ত্রজপের সংখ্যা বাড়াইতে থাক । মনে কর ক্রমে এক শত বার জপ করিতে পারিলে । তাহ পারায় তোমার কি হইল ?-- এই হইল যে, প্রথমে যতক্ষণ ধরিয়া দম লইতে এবং দম রাখিতে পারিতে এখন তাহার দশ গুণ অধিককাল ধরিয়া পার, তাছা কেন পায় ? তোমার ফুসফুসের আয়তন বৃদ্ধি হইয়াছে, তাহার পরিচালক পেশী গুলি দৃঢ় হইয়াছে এবং তাহার অন্তঃস্থিত সকল বায়ুকোষগুলির কার্য্যকারিতা সম্বৰ্দ্ধিত হওয়াতে তাহারা সতেজ হইয়া উঠিয়াছে। ফুসফুসের বল এইরূপে বৰ্দ্ধিত হওয়াতে আর কি হইয়াছে ? হৃৎপিণ্ড হইতে সমধিক পরিমাণে রক্তস্রোত আলিবীয় প্রয়োজন হইয়াছে এবং সেই প্রয়োজন সাধন করিবার নিমিত্ত হৃৎপিণ্ডকেও অধিক রক্ত ধারণ করিবার উপযোগী হইতে হইয়াছে। উহাও পূৰ্ব্বাপেক্ষায় বৃহত্তর হইয়াছে। লোকেও তোমাকে দেখিয়া বলে যে পূৰ্ব্বাপেক্ষ তোমার ছাতি ফুলিয়া উঠিয়াছে। যাহাদিগের সহিত একত্র হইয়া পুষ্করিণীতে স্নান করিতে এবং সাতার দিতে বা ডুবোডুবি খেলিতে তাহারা আর কেহ তোমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করিয়া জয়লাভ করিতে পারে না। তুমি অধিকক্ষণ সাতার দিতে পার—অধিকক্ষণ ডুব দিয়া থাকিতে পার—শীঘ্ৰ ক্লান্ত হইয় পড় না। বিশালবক্ষ, পরিশ্রমক্ষমতা, অক্লাস্তি—এগুলি যদি বলের লক্ষণ হয়, এবং বলবত্ত যদি আয়ুষ্মত্তার লক্ষণ হয় তবে প্রাণায়াম যোগ তোমাকে বলবান এবং দীর্ঘায়ুঃ করিয়াছে বলিতে হইবে । প্রাণায়ামযোগটা যেরূপে বর্ণিত হইল, এরূপে সকলেই করিতে পারে— জপের দ্বারা সময় ঠিক রাখিতে নিতান্তই অনিচ্ছা হয়, ঘড়ি ধরিয়া করিলেও এ যোগের কোন হানি হইবে না । কিন্তু ইহা নিত্য করা চাই - অল্পে অল্পে করা চাই এবং নিশ্বাস গ্রহণ, তাহার ধারণ এবং রেচন সমান সময়ে হওয়া চাই। এ সকল নিয়ম ব্যতিক্রম করিলে উপকার না হইয়া অপকারের যথেষ্ট সম্ভাবনা । কিন্তু প্রাণায়ামযোগে জপের সংখ্যা যদি পরিমিত না হইয়া আরও অধিক হয়, মন্ত্রের পূর্ণমাত্রা পর্যন্ত হয়, তাহ হইলে আর ওরূপে নাসিকারন্ধকে অঙ্গুলি দ্বারা সম্বদ্ধ করিয়া প্রাণায়াম করিতে হয় না। নিশ্বাস গ্রহণ করিয়া তাহার সংরোধ করিতে হয় এবং সেই অবস্থায় পূর্ণমাত্র জপ করিতে হয়। এইরূপ করাকে ‘কুম্ভক’ বলে। আমি এই ব্যাপারের চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করি নাই। তরে ইহার বিবরণ শুনিয়াছিলাম বলিয়া কুমার-সম্ভবে মহাদেবের তপশ্চরণ বর্ণন অতি সুস্পষ্টরূপে বুঝিতে পারিয়াছিলাম।