পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8文 বিবিধ প্রবন্ধ । খাপ্ত সামগ্রীর প্রকারভেদ, স্বাস্থত এবং উপকারিতা বৰ্দ্ধিত হইয়া নরগণকে স্বর্থী, সুধী এবং শান্তশীল করিয়া তুলে । পাক করিয়া খাওয়া এক্ষণে ময়ূন্যের একটা বিশেষ ধৰ্ম্ম হইয়া উঠিয়াছে। রন্ধনের প্রকারভেদ এবং তাহার কৌশল এত বৃদ্ধি পাইয়াছে যে, স্থপকারিতা একটী বিশেষ বিদ্যা এবং ব্যবসায় হইরা দাড়াইয়াছে । কিন্তু অগ্নির ব্যবহার যখন প্রথমে প্রবর্তিত হয়, তখন পাকের এত পারিপাট্য হয় নাই। তখন খাদ্য সামগ্রীকে অগ্নিতে পোড়াইয় লওয়া ভিন্ন উপায়ান্তর ছিল না। তাহার পর, অগ্নির সাক্ষাৎ সংস্পর্শ ব্যতিরেকে শূল্যাদি প্রস্তুত করিবার উপায় উদ্ভাবিত হয় । তদনন্তর খাদ্য দ্রব্য উষ্ণ জলে সিদ্ধ করিয়া লইবার প্রথা প্রবৰ্ত্তিত হয় । কিন্তু সে সময়ের সিদ্ধ করিবার রীতি এক্ষণকার রীতি হইতে স্বতন্ত্র । তখন হাড়ি, কলসী, মালসা প্রভৃতি মৃৎপাত্রের এবং কড়া, বঁটুল, বহুগুণ প্রভৃতি ধাতু পাত্রের কিছুরই স্বষ্টি হয় নাই । তখন ভূমি মধ্যস্থ গর্তে, অথবা মৃগয়ালব্ধ পশুর চৰ্ম্মে, কিম্বা গাছের ডাল কাটিয়া তাহার চেয়াড়ির দ্বারা নিৰ্ম্মিত চুপড়িতে অথবা বৃহদাকার শম্বুকাদির কিম্বা বৃহৎ বৃহৎ ফলের খোলায়, তরল পদার্থ ধারণের উপযোগী পাত্র প্রস্তুত হইত। ঐ সকল পাত্রের কোনটাতেই অগ্নির জ্বাল দিবার যে নাই । এই জন্ত তখনকার লোকেরা কোন দ্রব্য জলে সিদ্ধ করিয়া লইতে হইলে, ঐরূপ কোন পাত্র জলপূর্ণ করিয়া তাহাতে সেই দ্রব্যটা রাখিয়া অন্য স্থানে অগ্নি প্ৰজলিত করিত এবং সেই অগ্নিতে উপলখণ্ডাদি উত্তপ্ত করিয়া ঐ পাত্রস্থ জলে নিক্ষেপ করিত । তাহাতে জলে গরম হইয়া উঠিত এবং সেই জল খাদ্য দ্রব্যটা এক প্রকার সিদ্ধ হইত। এরূপ করিয়া সিদ্ধ করিতে অনেক সময় যায় এবং অনেক পরিশ্রম হয় । সুতরাং ইহার প্রতি বিধানের নিমিত্ত বিশেষ চেষ্টাই হইতে থাকে। প্রথমে প্রস্তর দ্বারাই জালসহ পাত্রের নিন্মাণ চেষ্ট হয়। পরে চেয়াড়ি অথবা পশুচৰ্ম্ম কিম্বা শৰ্ম্মক অথবা ফলের খোলায় যে সকল পাত্র নিৰ্ম্মিত হইয়া থাকে, তাহার তলায় খুব পুরু করিয়া মাটির লেপ দিয়া উহাদিগকে জালসহ করা হয় । এইরূপ করিতে করিতেই দৃষ্ট হইয়া থাকে যে, শুদ্ধ মাটি হইতেও তদ্রুপ পাত্রের গঠন হইতে পারে। মাটির পাত্রকে রৌদ্রে শুষ্ক করিয়া লওয়াই প্রথম ব্যবস্থা, তাহার পর তাহাকে পোড়াইয়া লইবার রীতিও প্রবর্তিত হইয়া যায় । কুম্ভকারের ব্যবসায়ের এইরূপে অল্পে অল্পে উদ্ভব হইয়াছে। এদেশে উহা এই পৰ্য্যন্তই উন্নতি লাভ করিয়াছে {