পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

今や বিবিধ প্রবন্ধ । পূৰ্ব্বকালের দাসত্ব এখনকার ইউরোপীয়দিগের প্রবৰ্ত্তিত দাসত্ব প্রণালীয় স্তার অতি কঠোর ব্যাপার ছিল না। আমি সেই পুৰ্বকালের দাসত্ব দশার অতি ঈষন্মাত্র চিকু উড়িষ্যা ভ্রমণ করিতে গিয়া দেখিয়াছি। খাণ্ডাইত জাতীয় অতি সন্ত্রান্ত কোন ব্যক্তির গৃহে দিন কয়েক অতিথি হইয়াছিলাম। সেই গৃহে কয়েকট সুন্দর যুবা পুরুষকে ভূত্যকার্য্যে নিযুক্ত দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, উহার কোন জাতীয়। শুনিলাম, উহারা “পাউলিপুয়া” অর্থাৎ উহারা গৃহ-পালিত দাসীদিগের গর্ভজাত পুত্র। পূৰ্ব্বেও এই প্রণালীতে আর্য্যদিগের গৃহে গৃহে উৎকৃষ্ট বর্ণসঙ্কর সকল জন্মগ্রহণ করিয়াছিল এবং সেই কারণেই প্রথমে ব্রহ্মর্ষিদেশ তদনন্তর ব্রহ্মাবৰ্ত্ত দেশ এবং পরিশেষে সমুদয় আর্য্যাবৰ্ত্ত ভূমি কিয়ৎপরিমাণে আর্য্যলক্ষণাক্রান্ত মমুস্থ্যের বাসভূমি হইয়া উঠিয়াছে। মনুসংহিতায় স্পষ্টই দেখিতে পাওয়া যায় যে, পুৰ্ব্বকালে অমুলোম বর্ণসঙ্করের উৎপত্তি তেমন দোষাবহ বলিয়া গণ্য হইত না । উচ্চপুরুষ নীচকুলের কন্যা গ্রহণ করিতে পারিতেন—কিন্তু নীচকুলের পুরুষ উচ্চ কুলের কন্যা গ্রহণ করিলে বড়ই দোষ হইত। এই অকুলোম বিবাহের ব্যবস্থা এবং বিলোম বিবাহের নিষেধ যে জীবমাত্রের স্বভাবসিদ্ধ এবং বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তের সৰ্ব্বতোভাবে অমুকুল তাহ বলিবার অপেক্ষ নাই। ইহারই প্রভাবে ভারতবর্ষের সমুদয় উত্তরাঞ্চল এবং মধ্যভাগও অনেক দূর পর্য্যন্ত আৰ্য্যলক্ষণাক্রান্ত হইয়া গেল। শুদ্ধ শারীর লক্ষণেই যে পূৰ্ব্বাপেক্ষায় অধিকতর সাদৃশু হইল তাহা নহে, যেমন আর্য্য পুরুষদিগের ঔরসে আদিমনিবাসী স্ত্রীদিগের গর্ভে সুন্দরী সন্তান সকল জন্মিয়া পরস্পর সাদৃশ্ব প্রাপ্ত হইল, তেমনি আদিম জাতীয়দিগের বিবিধ ভাষার প্রতি আৰ্য্যভাষা সংস্কৃতের বলপ্রয়োগ হওয়াতে প্রাকৃতাদি ব্যাপকতর ভাষাও জন্মিল, আর অনার্য্যজাতীয়দিগের উপাসিত এবং পূজিত বিভিন্ন দেবদেবীগুলিও আর্য্যঋষিদিগের শাস্ত্রমধ্যে পরিগৃহীত হইয়া অপেক্ষাকৃত উচ্চতর আধ্যাত্মিক ভাব ধারণ করিয়৷ উঠিল। কিন্তু উল্লিখিতরূপে যেমন শারীরসাদৃশু, ভাষা সাদৃশু এবং ধৰ্ম্ম সাদৃশু জন্মিয়া উঠিল, অমনি তাহার অবশুম্ভাবি ফলও ফলিল । বিলোমসঙ্কর উৎপন্ন হইতে লাগিল, প্রাকৃতাদি ভাষার প্রচলন সংস্কৃতের অপেক্ষ বৰ্দ্ধিত হইয়া উঠিল এবং ধৰ্ম্মভাবে আধ্যাত্মিকতা নুনি হইয় অনুষ্ঠানমাত্রের আড়ম্বর প্রবল হুইল । ব্রাহ্মণদিগের আর পূর্বের মত জীও রহিল না, বিদ্যাও রহিল না, আর তপঃপ্রবৃত্তিও রহিল ল ।