পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় ভাগ । *န္ဈ যখন আর্ধ্যাবৰ্ত্তে আর্য্যতেজঃ অতি বিস্তৃত হইয়া ক্রমে ক্রমে স্তিমিত ভাব প্রাপ্ত হইতে লাগিল তখনও দাক্ষিণাত্যে উহা সবেগে প্রবাহিত হইতেছিল— সাগরসঙ্গম স্থলে ভাট পড়িতে আরম্ভ হইলেও নদীর উচ্চভাগে জোয়ারের জল অনেকক্ষণ চলিতে থাকে। সরযু, গঙ্গা, যমুনা, সিন্ধু, সরস্বতী তীরে, অযোধ্য, কাশী, প্রয়াগ, ইন্দ্রপ্রস্থ, কুরুক্ষেত্র, মথুরা প্রভৃতি স্থানে আর্য্যের তেজ কম, কিন্তু রেবাতটবর্তী বিশালায়, শিপ্রাসন্নিহিত উজ্জয়িনীতে, গোদাবরী সমীপস্থ নাশিকে আর কাবেরীতীরে ও কাঞ্চীপুরে ঐ তেজ: ক্রমশঃ বৃদ্ধিশীল হইয়া চলিল এবং অনার্য্য গোষ্ঠীয়রা কিয়ুৎপরিমাণে আর্য্যভাববিশিষ্ট হইতে লাগিল । ও প্রদেশে আর্য্যতেজস্বিতার হ্রাস হয় নাই । আর্য্যভাব যে প্রদেশে অতি প্রবল হইয়া প্রথমেই বিশিষ্টত পরিহার করিয়াছিল সেই অযোধ্য প্রদেশেই ক্ষত্রিয় রাজকুলে বুদ্ধদেব আবিভূত হইলেন এবং নীতির প্রাধান্ত ও ধৰ্ম্মানুষ্ঠানের অপ্রাধান্ত, তপোবলের উৎকর্ষ এবং জাতিভেদের অপকর্ষ অর্থাৎ মনুষ্যমাত্রের সাম্যবাদ প্রচার করিতে আরম্ভ করিলেন । যেমন শুষ্ক ইন্ধন অগ্নি পাইবামাত্র জ্বলিয়া উঠে, তেমনি সাম্যভাবপ্রাপ্ত সমস্ত আৰ্য্যাবৰ্ত্ত বৌদ্ধধৰ্ম্মে প্রদীপ্ত হইয়া উঠিল। অশোক, বিশ্বসার প্রভৃতি অধিরাজবর্গ বৌদ্ধধৰ্ম্মে দীক্ষিত হইলেন। শূদ্রজাতীয়ের যতি ধৰ্ম্মে অধিকার প্রাপ্ত হইল । প্রাকৃত হইতে অনধিক ভিন্ন পালি বা পারীভাষায় ধৰ্ম্মগ্রন্থ সকল বিরচিত হইতে লাগিল এবং বৈদিক ধৰ্ম্মের স্থানে বৌদ্ধধৰ্ম্ম শিক্ষিত হইতে আরম্ভ হইল। নূতন ধৰ্ম্মে দীক্ষিত বৌদ্ধ যতিগণ দক্ষিণাত্যে প্রবেশ করিলেন—দাক্ষিণাত্য ছাড়াইয়া লঙ্কাদ্বীপে, যব দ্বীপে, মালাক, ব্ৰহ্ম এবং চীনে স্বধৰ্ম্ম বিস্তার করিতে গেলেন। দূরবর্তী দেশ সকল উহাদিগের সাম্যবাদের স্থল হইল। উস্থার চীন, ব্রহ্ম, জাপান, তাতার প্রভৃতি ভূভাগকে স্বতঃ পরতঃ বৌদ্ধ ধৰ্ম্মে দীক্ষিত করিতে লাগিলেন—ঐ সকল দেশের অধিবাসীরা রূপে গুণে অনেকটা সম প্রকৃতিক । কিন্তু ভারতবর্ষে তখনও জনগণের মধ্যে সম্যকু সমভাব জন্মে নাই । দক্ষিণাত্যের লোক সকল যে আৰ্য্যাবৰ্ত্তের জনগণ হইতে কত বিভিন্ন তাহা যিনি একবার ঐ প্রদেশে গিয়াছেন তিনিই সুস্পষ্ট দেখিতে পাইয়াছেন। আবার কি দাক্ষিণাত্য, কি আর্য্যাবৰ্ত্ত উভয় প্রদেশের লোক সকল হইতে বন এবং পৰ্ব্বতনিবাসী ভিল, গোন্দ, কোল, সাওতাল প্রভৃতির বৈলক্ষণ্যের সীমা নাই—ইহারাই বোধ হয় আদিম অধিবাসীদিগের বংশধর । তদ্ভিন্ন কি আধ্যাবর্তে, কি দাক্ষিণাত্যে সৰ্ব্বত্রই