পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) প্রথম ভাগ.djvu/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৃচ্ছকটিক । ১২৫ সেনাকে গালি দিয়া “মীনাসা” (নিম্ননাস) বলিতেছে। “নিম্ন নাসা” বিশুদ্ধ আর্য স্ত্রী পুরুষের লক্ষণ নয়—যেখানে নিম্ন নাসা দেখা যায়— 'সেই স্থলেই অনাৰ্য্য শোণিতের মিশ্রণ বুঝিতে হয়। অপর এক স্কুলে বসন্তর্সেনাকে গাঢ়ান্ধকারে হারাইয়া বলা হইতেছে মসীরাশি মধ্যে যেন ‘অগ্নি গুড়িয়া” (অঞ্জন গুটিকা) হারাইয়া গেল। এই কথায় বসন্তসেনার বর্ণটা গেীর না হইয়া কিছু কাল বলিয়াই বোধ হয়। কৃষ্ণবণতাও অনাৰ্য্য সংস্রবের স্পষ্ট লক্ষণ । অতএব মনে করা যাইতে পারে যে, বসন্তসেন “বিশাললোচনা” খামাঙ্গী সুন্দরী। বসন্তসেনা যে সমস্ত কলাবিদ্যায় বিদ্যাবতী, তাহ বলিবার অপেক্ষ কি ? তাহার স্বর বৈচিত্রীকরণ ক্ষমত, পদবিন্যাসাদির লঘুতা, সৰ্ব্বকার্য্যে প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব বিশিষ্টরূপেই প্রদর্শিত হইয়া তাছার বাট যে, সমস্ত কলাবিদ্যার আগারস্বরূপ, তাহ স্পষ্টরূগেই কথিত হইয়াছে। বসন্তসেনা অন্যান্য সংস্কৃত নাটকাদির অত্যুৎকৃষ্ট নায়িকদিগের ন্যায় সংস্কৃত ভাষাও জানিতেন। তবে তাহার সংস্কৃতজ্ঞতা কিরূপ ছিল, তাহা কবি একটু বিশেষ কৌশল অবলম্বনপূর্বক বড় পরিষ্কাররূপেই দেখাইয়। দিয়াছেন। বসন্তসেনা কদাপি উচ্চ শ্রেণীর পাত্রদিগের নিকট সংস্কৃত ভাষায় কথোপকথন করিতে যান না। তিনি কলাবিদ্যার শিক্ষাদাতা বিটের সহিত সংস্কৃতে বাক্যালাপ করেন, আর বিদূষককেও সাক্ষাৎ সম্বন্ধে যাহা কিছু বলিতে হয় তাহা সংস্কৃত্রে বলেন। তদ্ভিন্ন তাহার স্বগত উক্তি গুলিও প্রাকৃত ভাষায় হয়, সংস্কৃতে হয় না। কবি এইরূপে দেখাইলেন যে, স্ত্রীলোককে বিদ্য ফলাইতে দেখিলে ভদ্র লোকের যে অশ্রদ্ধা হয় বসন্তসেনা তাহ বুঝিতেন, এবং বসন্তসেনার সংস্কৃতজ্ঞতা এমন পাক রকমেরও ছিল না যে, স্বয়ং সংস্কৃতে চিন্তা করিতে পারেন।