পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

उछधिका Գ একমত নই। উহা পরলোকতত্ত্ব নয়, পরলোকের উপন্যাস। বস্তুত যাঁহারা বিভতিভষণের রচনায় ক্ষণে ক্ষণে তত্ত্ব আবিস্কার করিয়া থাকেন, তাঁহাদেরই সঙ্গে আমার মতের গভীর অনৈক্য । তত্ত্ব যদি কিছ থাকে থাকুক, তাহাতে বিভতিবাবর কৃতিত্ব নয়, বরঞ্চ যেখানেই তত্ত্বের বাড়াবাড়ি সেখানেই তাঁহার রচনার দািব লতা। যখনই তিনি ভাবিতে শার করেন, অপর মতো কথা বলেন ; কিন্তু যখন তিনি অন্যভব করিতে শার করেন, তাঁহার তুলনা নাই । বিভীতিবাবার জগৎ চিন্ময় নয়, হৃন্ময় ! ঐখানেই তাঁহার বৈশিষ্ট্য। মানষের ও প্রকৃতির সংসারে ( বিভতিবাবার কাছে দইজনে প্রতিবেশী ও একই খেলাঘরের খেলড়ি ) যে-আনন্দ ছড়ানো রহিয়াছে, EI doradoর রাজপথে যেমন মণিমাণিক্য ছড়ানো থাকে, তেমনিভাবে সে সহজ সখদঃখ ছড়ানো আছে, বিভতিবাবা মগধ অপর মতো তাহা কুড়াইয়া আচিলে সংগ্ৰহ করিয়াছেন। তবে কি তাঁহার জগতে দঃখ নাই ? অবশ্যই আছে। কিন্তু তাহাও খেলাঘরের দঃখের চেয়ে তীব্রতর নয়, খেলা ভাঙিলেই সে দঃখ ভুলিতে বেশিক্ষণ লাগে না, অবশিষ্ট থাকে খেলার সাখাটি। যে Joy in widest commonality spread, তাহাকেই গভীরভাবে শািন্ধভাবে গ্রহণ এবং সরলভাবে প্রকাশ বিভতিভাষণের যথাৰ্থ কৃতিত্ব এবং তাঁহার সাহিত্যিক অমরত্বের দাবিও ঐ সত্রে । বিভতিভষণের রচনার পরিমাণ নিতান্ত সামান্য নয়। দ-একখানা বই বাদে তাঁহার সবগলি রচনাই সপোঠ্য ও উচ্চাঙ্গের সাহিত্য । মল্যবান রেশমী কাপড় যেমন নিবিশেষে গায়ে লাগিয়া থাকে, একটও বেখাপ হয় না, তেমনি তাঁহার ভাষা ও ভাব গায়ে গায়ে লাগিয়া আছে, কোথাও এতটুকু ব্যবধান নাই । এমন যে হইতে পারিয়াছে তাহার কারণ বিষয়ানিবাচনে তিনি ভুল করেন নাই । তাঁহার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্হ “পথের পাঁচালী’কে অনেকেই তাঁহার শ্রেষ্ঠ রচনা মনে করেন। প্রথম গ্রন্হেই তাঁহার প্রতিভার যোগ্য বিষয়কে লাভ করিয়াছেন, এমন সৌভাগ্য অলপ লেখকেরই হইয়া থাকে । অনেক লেখক আছেন যাঁহারা ভুল করিতেই অভ্যস্ত। হেমচন্দ্রের স্বাভাবিক শক্তি ছিল ব্যঙ্গ-রচনায়, অথচ তিনি বািহদাকার মহাকাব্য রচনায় শক্তির অপব্যবহার করিয়া গিয়াছেন। আবার নবীনচন্দ্রের স্বাভাবিক শক্তি লিরিক রচনায়, তিনিও মহাকাব্য রচনায় শক্তির অপব্যবহার করিয়াছেন। বিভতিভীষণ এদিক দিয়া সৌভাগ্যবান। বিষয় ও বিষয়ী এখানে অঙ্গাঙ্গনী । এমন যে হইতে পারিয়াছে তাহার। আবার মািল কারণ, বিভতিভষণের মধ্যেকার শিল্প ও ব্যক্তিতে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না, শিল্পী ও ব্যক্তি পরস্পরের সমর্থক ও পরিপািরক ছিল। অনেক স্থলেই দেখা যায় ব্যক্তি ও শিলপীতে একটা দ্বন্দ্বের ভাব বিদ্যমান, এবং সেই সত্রে তাঁহাদের রচনা দ্বিধাগ্রান্ত ; তাঁহাদের রচনাও পাঠককে পণ্য তৃপ্তি দান করিতে পারে না । বিভতিভষণের তুচ্ছতম রচনা ও বহত্তম উপন্যাস সমস্তই পাঠককে তৃপ্ত করিয়া থাকে, কারণ সেখানে ব্যক্তি ও শিল্পী দাই জনেই সমান তৃপ্তির সহিত রচনাকাযে সহযোগিতা করিয়াছে, কোথাও এতটকু অতৃপ্তির দ্বিধা নাই।