পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সিদ্যরচরণ ISO —কোথায় যাবা ? --বেড়াতি যাবা রাণাঘাটের দিকি । --তামাক খাও বসে । সিদ্যরচরণ তামাক খেতে বসলো। কাছেই একটা বাঁশনি বাঁশের ঝাড় সিদ্যরচরণ সেদিকে চেয়ে ভােবলে--এই বাঁশনি বাঁশের ঝাড়টা এদেশে, আবার অন্য দেশেও গিয়ে কি এমনি দেখা যাবে ? সে আবার না জানি কি রকম বাঁশনি বাঁশি । এই রকম কোঁচো, এই রকম কচুর ফলে কি অন্য জায়গাতেও আছে ? দেখতে হবে বেড়িয়ে। সত্যি, বড় মজু দেশবিদেশে বেড়ানো। সিদ্যরচরণ স্টেশনে পৌছবার কিছু পরে টিকিটের ঘণ্টা পড়লো ঢং ঢেং করে । একজন ওকে বললে-যাও গিয়ে টিকিট করো । গাড়ী আসচে । টিকিটের জানলায় গিয়ে ও বললে-ও বাবা, একখানা টিকিট দ্যান QT乙司一 টিকিটবােব বললে-কোথাকার টিকিট ? —দ্যান বাব, রাণাঘাটেয়ই দ্যান আপাতোক একখানা । গাড়ীতে উঠে সিন্দারচরণের ভীষণ আমোদ হলো। সে আমোদ রপান্তরিত হলো বার বার ওর ধর্মপান করবার ইচ্ছায় । ঘন ঘন বিড়ি খায়, এই ধরায়, এই খায়। কয়েকটি বিড়ি খেতে খেতেই রাণাঘাটে গাড়ী এসে পড়াতে ও আশ্চৰ্য্য হয়ে পড়লো। ষোল মাইল রাস্তা যে এত অলপ সময়ে এসে পড়বে, তা ও ভাবেই নি । রাণাঘাটে নেমে এখন কোথায় যাওয়া যায় ? এমন অনেক দরে যেতে হবে, যেখানে কখনো সে যায়নি । সেন্টশনের এপারে একটা উচুমত রোয়াক বাঁধানো জায়গা খাব লম্ববা । তার দধারে রেল লাইন পাতা। সেই লম্বা রোয়াকের ওপর লম্বা একটা টিনের চালা। অত বড় টিনের চালার তলার বা রোয়াকটার অন্যদিকে লোকে পান। বিড়ি, চা, খাবার ইত্যাদি বিক্রি করচে-লোকজনে কিনচে। যেন একটা মেলা বসে গিয়েচে । মাড়িঘাটায় গঙ্গাস্নানের যোগের সময় এ রকম মেলা সে দেখেচে । একদল উত্তরে লোক তার সঙ্গে একই ট্রেন থেকে নেমে বিড়ি টেনে আন্ডা জমিয়েচে টিনের চালার নীচে । ও সেখানে গিয়ে বললে-কনে যাবা ? তারা বললে--মাকসন্দাবাদ ; বেলডাঙা। -সে কনে ? --উত্তরে । -কোথায় গিয়েলে ? -পাট কাচতে গেছলাম ওই কনসোনা, তালহাটি, মেহেরপরে। মেহেরপর গ্রাম সি দারচরণের বাড়ীর কাছে। লোকগুলো সেখান থেকে আসছে শানে সিন্দারচরণের মনে হলো এই দারু বিদেশ-বিভায়ে এরাই তার পরম আত্মীয়। সে বললে-মেহেরপরের নাসিবন্দি সেখরে চেন ? —তেনার বাড়ীতেই তো ছিলাম। আমরা। বছর বছর তেনার পাট কাচি । বিভতি শ্রেষ্ঠ গল্প-৮