পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SN Wé বিভতিভষণের শ্রেষ্ঠ গল্প -এ কী আক তুমি দেখচো, বেলডাঙার ওদিকে ষাট সত্তর একশো বিঘের এক এক বন্দ, শব্দ-আক । ওর বন্ধর বাড়ীতে দিন দাই থাকার পরে আকের জমির মজার দরকার হয়ে পড়লো। ওদের পরামশে সিদ্যরচরণও আকের ক্ষেতে আক কাটবার কাজে লেগে গেল। আট আনা রোজ । সিদ্যরচরণদের দেশে মজারের রেট সওয়া পাঁচ আনা । সে দেখলে মজরির রেট বেশ ভালোই ! দদিনে একটা টাকা রোজগার, হবেই বা না কেন, কোন দেশ থেকে কোন দেশে এসে পড়েচে - এখানে সবই সম্ভব ! নাগরপাড়ার ওপারে বোরগাছি, তার পাশে ধবলি । এই দই গ্রাম থেকে অনেক মজর আসতো আখের ক্ষেতে কাজ করতে । ওদের মধ্যে একজনের সঙ্গে সিদ্যরচরণের খব ভাব হয়ে গেল । সে বললে-আমাদের গোরামে যাবা ? সেখানে ঘোষ মশায়দের বাড়ীতে একজন কিষাণ দরকার । দশ টাকা মাইনে, খাওয়া-পরা । সিদ্যরচরণের কাছে এ প্রস্তাব লোভনীয় বলে মনে হলো । তাদের দেশে কৃষাণীদের মাইনে মাসে পাঁচ টাকার বেশি নয়, খাওয়া-পরার কথাই ওঠে না। সেখানে । এবার পাটের দাম বেশি হওয়াতে কৃষাণীদের রেট এক টাকা বেড়েচে মাসে-তাও কতদিন এ চড়া রেট টিকবে তার ঠিক নেই। হাতে কিছু টাকা করে নেওয়া যায়। এদেশে থাকলে । কিন্তু এতদর বিদেশে সে থাকবে কতদিন ? সে জবাব দিলে-না ভাই, আমার যাওয়া হবে না । -চাকরি করবা না ? --মরতি যাবো কেন বিদেশে পড়ে ? মোদের গাঁয়ে চাকরির অভাবডা কী : খেয়ে দেয়ে হাতে দােপয়সা জমেছে যখন, তখন পরের চাকরি করতে যাবার দরকার নেই । রোজ রোজ মােজরি চলে। আজকাল একদিনও সে বসে থাকে না । ভালো একখানা রঙিন গামছা কিনে ফেললে তেরো পয়সা দিয়ে বাহাদরেপরের হাটে একদিন । রঙিন গামছাখানাই হলো কাল-এখানা কিনে পয্যন্ত তার কেবলই মনে হতে লাগলো কাতু যদি তাকে এ গামছা-কাঁধে না দেখলো। তবে আর গামছা কেনার ফলটা কি ? সবজি গামছাখানা তো সেদিন কিনেছিল সে কাতুর জন্যে । একদিন কাজকৰ্ম্ম সেরে বিকেলে সে মাঠের দিকে বেড়াতে গিয়েচে । একটা বড় ঘোড়া-নিমগাছ ছায়া ফেলেচে অনেকখানি ফাঁকা মাঠে । সেখানে বসে চুপি চুপি কোমর থেকে গেজে খালে পয়সাকড়ি উপড়ে করে সামনে ঢেকে গানে দেখলে, উনিশ টাকা তেরো আনা জমেচে মজরি করে । সামনে একটা খালে তেরো-চোদ্দ বছরের সন্দরী মেয়ে শামকগগাল তুলচে ? ও বললে—কি তোলচো, ও খাকি ? মেয়েটা বিস্ময়ের সরে বললে-কি ? --তোলচো কী ?