পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সিদারচরণ SSసి বললে ~~না না—তাই বলচি । কাতু বললে—এখন তুমি এসো গিয়ে । ছিচরণ তবও যায় না । বলে-ওরে দাঁড়া । যাবো, যাবো, থাকতি আসিনি । এই দ-বিশ ধান কােজ দেলাম পাঁচুরে । বলি হয়েচে দেড় পৌটি ধান, তা লোকের উপকারে লাগে তো লাগক। ধান ঝেড়ে দিয়ে-থয়ে এই আসাঁচ । বন্ড কম্পট হয়েচে আজ । কাতু ঝাঁঝালো সরে বললে-কািট কুড়েবার আর কি জায়গা নেই গাঁয়ে ? ——তোর সঙ্গে দটো কথা বললি আমার মনডা জড়োয় সত্যি বলচি কাতু । তোরে দেখে আসচি ছেলেবেলা থেকে । আমি যখন গোর চরাই তখন তুই এতটকু । তোর বয়েস আমার চেয়ে সাত আট বছরের কম । --বেশ, তা এখন যাও । বয়েসের হিসেব কষতি কে বলচে তোমারে ? -হ্যাঁরে, সিদ্যরচরণ তোরে ফেলে এমনিই পালালো, না পয়সাকড়ি কিছ: দিয়ে গিয়েচে ? চলা-চলতির একটা ব্যবস্থা চাই তো ? —সেজন্য তোমার দোরে গিয়ে কোঁদে পড়লাম মই, জিজ্ঞেস করি ? ছিচরণ বেগতিক দেখে আস্তে আস্তে চলে গেল। কাতু কাঁদতে বসলো । তারও বয়েস হয়েচে একথা সত্যি, প্রায় পািয়তাল্লিশের কাছাকাছি, কি তার চেয়েও বেশি ।। ঘরসংসার বলে জিনিসের মািখ এই ক'বছর দেখেচে, সিদরচরণের কাছ থেকে । আবার কোথায় যাবে। এই বয়সে ? একটা পেট চলে যাবে, ভিক্ষে করা কেউ কেড়ে নেবে না। দদিনের গোরস্থালি ভেঙে যদি যায়-আর কোথাও গেরস্থালি বাঁধবে না, সব ছেড়ে পথে বেরিয়ে পড়বে । শিবির মা এসে দোরে দাঁড়ালো। কাতু জানে, ও কেন আসে। আসে একটা কারণ নিয়ে অবিশ্যি । বললে--একট, হলদিবাটা দেবা ? --নিয়ে যাও। —দ’মাসের হলদি এনেছিলাম ছিচরণ সন্দারের বাড়ী থেকে । তা ফরিয়ে গিয়েচে । ওর ঘরে কোনো জিনিসের অভাব নেই। হলদি বলো, ঝাল বলো, পেজ বলো, সরষে বলো--সব মজাদ ৷ গড় আমাদের দেয়। বছরে একখানা ক’রে । ওর ঘরে চার-পাঁচ মণ। গড় হয় ফি-বছর। কাতু বললে-তা এখন হলদি-বাটনা নেবা ? শিবির মা বললে-হলদি-বাটনা দ্যাও একটা । মাছ রাঁধবো । -- তবে নিয়ে যাও । --তোমার শরিল খারাপ হলে দেখাশোনা করে কে তাই ভাবচি । —সে ভাবনা তোমায় ভাবতি কেডা গলা ধরে সোধোচে শনি ? গা-জালা কথা শািনলি হয়ে আসে। ঠিক সেই সময় উঠানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কে ডাক দিলে-ও কাতু ! কাতু চমকে উঠেই পরীক্ষণে দাওয়া থেকে ছটে নেমে এসে বললে-তুমি ! ওমা, আমি কনে যাবো ! শিবির মা অন্য দিক দিয়ে পালানোর পথ খাঁজে পায় না শেষে ।