পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

किब्रज्ञ ब्ल পাড়াটায় ছ-সাত ঘর ব্ৰাহ্মণের বাস মোটে। সকলের অবস্থাই খারাপ । পরস্পরকে ঠকিয়ে পরস্পরের কাছে ধার-ধোর করে এরা দিন গজরান করে। অবিশ্যি কেউ কাউকে খাব ঠকাতে পারে না, কারণ সবাই বেশ হাশিয়ার। গরীব বলেই এরা বেশী কুচুটে ও হিংসক, কেউ কারো ভাল দেখতে পারে না, বা কেউ কাউকে বিশবাসও করে না । পম্বোেবই বলেচি, সকলের অবস্হা খারাপ, এবং খানিকটা তার দরুণ, খানিকটা অন্য কারণে সকলের চেহারা খারাপ। কিশোরী মেয়েদেরও তেমন লালিত্য নেই মাখে, ছোট ছোট ছেলেরা এমন অপরিস্কার অপরিচ্ছন্ন থাকে এবং এমন পাকা পাকা কথা বলে যে তাদের আর শিশ, বা বালক বলে মনে হয় না। কাব্যে বা উপন্যাসে যে শৈশবকালের কতই প্রশান্তি পাঠ করা যায়, মনে হয়। সে সব এদের জন্যে নয়, এরা মাতৃগভ থেকে ভমিল্ঠ হয়ে একেবারে প্রবীণত্বে পা দিয়েছে। পাড়ায় একঘর গহসহ আছে, তারা এখানে থাকে না, তাদের কোঠাবাড়ীটা চাবি দেওয়া পড়ে আছে আজ দশ-বারো বছর । এদের মস্ত বড় সংসার ছিল, এখন প্রায় সবাই মরে হেজে গিয়ে প্রায় পাঁচটি প্রাণীতে দাঁড়িয়েছে। বাড়ীর বড় ছেলে পশ্চিমে চাকুরি করে, মেজ ছেলে কলেজে পড়ে কলকাতায়, ছোট ছেলেটি জন্মাবধি কালা ও বোবা-পিসিমার কাছে থেকে মাক-বধির বিদ্যালয়ে পড়ে । বড় ছেলে বিবাহ করে নি, যদিও তার বয়স ত্রিশ-বত্ৰিশ হয়েছে, সে নাকি বিবাহের বিরোধী, শোনা যাচ্ছে যে এমনি ভাবেই জীবন কাটাবে। পাড়ার মধ্যে এরাই শিক্ষিত ও সচ্ছল অবস্হার মানষ । সে জন্যে এদের কেউ ভাল চোখে দেখে না, মনে মনে সকলেই এদের হিংসে করে, এবং বড় ছেলে যে বিয়ে করবে না বলেছে, সে সংবাদে পাড়ার সবাই পরম সন্তুটি । যখন সবাই ছোট ও গরীব, তখন একঘর লোক কেন এত বড় বাড়বে ? বড় ছেলে বিয়ে করলেই ছেলেমেয়ে হয়ে জাজাবল্যমান সংসার হবে দাদিন পরে, সে কেউ সহ্য করতে পারবে না । মেজ ছেলে মোটে কলেজে পড়ছে, এখন সাপ হয় কি ব্যাং হয় তার কিছ ঠিক নেই, তার বিষয়ে দাঁশ্চিন্তার এখনও কারণ ঘটে নি, তার বয়েসও বেশী নয় । মজমিদার বাড়ীতে ভাঙা রোয়াকে দাপরে পাড়ার মেয়েদের মেয়ে-গজালি হয়। তাতে রায় গিন্নী, মখায্যে গিন্নী, বোস গিন্নী, চক্কত্তি গিন্নী প্রভৃতি তো থাকেনই, পাড়ার অলপবয়সী বৌয়েরা ও মেয়েরাও থাকে। সাধারণত যে সব ধরণের চচ্চা এ মজলিসে হয়ে থাকে, তা শনলে নারীজাতি সম্পবন্ধে লিখিত নানা সরস প্রশংসাপণে বণনার সত্যতার সম্বন্ধে ঘোর সন্দেহ যাঁর উপস্হিত না হবে, তিনি নিঃসন্দেহে একজন খাব বড় ধরণের অপটিমিস্ট। আজ দাপরে যে বৈঠক বসেছে, তাতে আলোচিত বিষয়গালি থেকে মোটামটি প্রতিদিনের আলোচনার ও বিতকের প্রকৃতি অনমান করা যেতে পারে।