পাতা:বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প.pdf/১৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তারানাথ তান্তিকের গল্প ᏚᏬᏬ গাঁয়ের লোকে ঠিকই বলে । কিন্তু ফেরবার পথ। তখন আমার বন্ধ। পাগলী আমায় যা যা করতে বললে সন্ধ্যা থেকে আমাকে তা করতে হলো । শব- সাধনার অনষ্ঠান সম্পবন্ধে সব কথা তোমায় বলবার নয়। সন্ধ্যার পর থেকেই আমি শবের আসন করে বসলাম। পাগলী একটা অৰ্থ-শান্য মন্ত্র আমাকে বললে-সেটাই জপ করতে হবে অনবরত । আমার বিশ্ববাস হয়নি যে, এতে কিছ হয় । এমন কি, ও যখন বললে-যদি কোন বিভীষিকা দেখ। তবে ভয় পেয়ো না, ভয় পেলেই মরবে-তখনো আমার মনে বিশ্ববাস হয়নি । রাত্ৰি দােপর হলো ক্লামে। নিজজন শামশান, কেউ কোন দিকে নেই, নীরন্দ্র অন্ধকারে দিক বিদিক লকিয়েছে। পাগলী যে কোথায় গেল, তাও আমি আর দেখিনি । হঠাৎ একপাল শেয়াল ডেকে উঠল। নদীর ধারে একটা কষাড় ঝোপের আড়ালে । শেয়ালের ডাক তো কতই শনি, কিন্তু সেই ভয়ানক শামশানে এক টাটকা মড়ার ওপর বসে সে শেয়ালের ডাকে আমার সবঙ্গি শিউরে উঠল। ঠিক সঙ্গে সঙ্গে আর একটি ব্যাপার ঘটল । বিশ্ববাস করা না-করা তোমারই ইচ্ছে কিন্তু তোমার কাছে মিথ্যে বলে আমার কোন সবার্থ নেই। আমি তারানাথ জ্যোতিষী, বঝি কেবল পয়সা।--তুমি আমাকে এক পয়সা দেবে না, সতরাং তোমার কাছে মিথ্যে বলতে ষাবি কেন । শেয়াল ডাকার সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে হলো শামশানের নদীর জল থেকে দলে দলে সব বৌ-মানষেরা উঠে আসছে।--অলপবয়সী বোঁ, মাখে ঘোমটা টানা, জল থেকে উঠে এল অথচ কাপড় ভিজে নয় কারো-দলে দলে--একটা, দটো, পাঁচটা, দশটা, বিশটা ৷ তারা সকলে এসে আমায় ঘিরে দাঁড়াল-আমি একমনে মন্ত্র জপ করছি। ভাবছি যা হয় হবে । একটি পরে ভালো করে চাইতে গিয়ে দেখি, আমার চারপাশে একটাও বেী নয়, সব কররা পাখী, বীরভামো নদীর চরে যথেস্ট হয়। দ-পায়ে গম্ভীর ভাবে হাঁটে, ঠিক যেন মানষের মত । এক মহত্তে মনটা হালকা হয়ে গেল-তাই বল। হরি হরি-পাখী । চিন্তাটা আমার সাণপণে শেষ হয়নি-পরীক্ষণেই আমার চারপাশে মেয়ে-গলায় কারা খল খল করে হেসে উঠল ! বললে-তোমার বেলা এসেছি সম্প্রদায় রক্ষার জন্যে-অত ভয় কিসের ! আমি না তোকে লাথি মেরেছি ? মেশানের পোড়া কাঠ ছাড়ে মেরেছি। তোকে পরীক্ষা না করে কি সাধনার নিয়ম বলে দিয়েছি তোকে ? আমি ভয়ানক আশচষ্য হয়ে গিয়েছি। বলে কি ! মেয়েটি আবার বললে-কিন্তু মহােডামরীর বড় ভীষণ রােপ, তোর যেমন ভয়, সে তুই পারবি নো-ও ছেড়ে দে --আপনি যখন বললেন। তাই দিলাম ।